হাতে পেয়ে গেলেন এনসিএ-র টেস্ট লাইসেন্স
যুবরাজের চোখে এখন অপারেশন ১৫ নভেম্বর
স্বপ্ন সফল! অসফল স্বপ্নের দিকে যাত্রা!
‘কিং ইজ ডেড, লং লিভ দ্য কিং’-এর মতো। যুবরাজ সিংহের মহাগুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ আরোহণ সমাপ্ত। যে পর্বতারোহণে তিনি একই সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত ক্যানসার রোগীর হয়ে অভিযাত্রী ছিলেন। যেখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করেছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে। টিম ইন্ডিয়া সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। কিন্তু তিনিযুবরাজ তাঁর যে ট্রফি জেতার ছিল, সিংহল থেকে নিয়ে ফিরেছেন।
এ বার দ্বিতীয় শৃঙ্গ। এ বারের আরোহণেও প্রচুর চড়াই-উতরাই। কিন্তু এই পর্বতারোহণ যত না ক্যানসারের বিরুদ্ধে অনমনীয় মানসিক যুদ্ধ, তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত ক্রিকেটীয় উচ্চাশার। যুবরাজ এ বার চান ভারতের টেস্ট দলে সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন ঘটাতে।
বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ফিটনেস সার্টিফিকেটই একমাত্র ভারতীয় বোর্ডের কাছে মান্য। এত দিন যুবরাজ তাদের কাছে কেবল টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্যই ফিটনেস সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন। বুধবার এনসিএ থেকে টেস্টের জন্য ফিটনেস সার্টিফিকেটও তাঁকে দিয়ে দেওয়া হল। তার আগে অবশ্য বাধ্যতামূলক ট্রেনিং করলেন। এর ফলে যা দাঁড়াল নির্বাচকরা একমত হলে ১৫ নভেম্বর থেকে আমদাবাদে ইংল্যান্ডের সঙ্গে তিনি চূড়ান্ত এগারোয় জায়গা পেতেই পারেন। ফিটনেস সার্টিফিকেটের অভাবে এত দিন যা সম্ভব ছিল না।
লক্ষ্যের দিকে
যুবরাজও এখন পুরোপুরি তাঁর নতুন প্রকল্পে। নতুন পাখির চোখ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়ে গিয়েছে। তাঁর নতুন প্রকল্পের নাম যেন ‘অপারেশন ফিফটিনথ নভেম্বর’।
এই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার তিনি চণ্ডীগড় রওনা হয়ে গেলেন। বাবা যোগরাজ সিংহের তত্ত্বাবধানে সেই ছোটবেলায় যেমন বড় ক্রিকেটার হওয়ার লক্ষ্যপূরণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, এ বারেও তাই। এ বারের যুদ্ধ আরও কঠিন। শুধু তো টেকনিক্যাল প্রস্তুতি নয়। প্রাণান্তকর ফিটনেস প্রস্তুতি। যুবরাজ হিসেব করে দেখেছেন নভেম্বরের মাঝামাঝির আগে তিনি অন্তত তিনটে ম্যাচ নিজের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য পাচ্ছেনই। ১৪ অক্টোবর থেকে হায়দরাবাদে উত্তরাঞ্চলের হয়ে দলীপ সেমিফাইনাল খেলবেন। উত্তরাঞ্চল যদি ফাইনালে ওঠে তা হলে দলীপেই দু’টো ম্যাচ হয়ে গেল। এর পর ২ নভেম্বর থেকে রঞ্জি খেলা। আমদাবাদ টেস্টের আগে তাঁর দু’টো রঞ্জি ম্যাচ খেলা হয়ে যাবে। যুবরাজ মনে করেন এ বার যেহেতু বোর্ড সব সিনিয়র ক্রিকেটারকেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে বাধ্য করবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের এই ম্যাচগুলোর পারফরম্যান্সকে নির্বাচকেরা গুরুত্ব দেবেন। অতীতের মতো বলবেন না যে এগুলো করা হয়েছে দ্বিতীয় সারির দলের বিরুদ্ধে।
এটা নিছকই কাকতালীয় যে ভারতীয় দলে যাঁর জায়গা তিনি নিতে চান তাঁর শহর থেকেই যুবরাজের টেস্ট প্রত্যাবর্তন অভিযান শুরু হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ভিভিএস লক্ষ্মণ। যুবরাজ-ঘনিষ্ঠরা মনে করেন, ভারতীয় দলে লক্ষ্মণের ছ’নম্বর জায়গাটা খালি পড়ে রয়েছে। যুবরাজ ওখানে আদর্শ হতে পারেন। যেহেতু শুধু ব্যাট নয়, তিনি বল করেও গুরুত্বপূর্ণ উইকেট এনে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
লক্ষ্যে পৌঁছে
২৬ নভেম্বর ২০১১ সাংবাদিক সম্মেলনে মা শবনমের ঘোষণা, ফুসফুসে নন-ম্যালিগনান্ট টিউমার হয়েছে।
২৮ নভেম্বর ২০১১ আনন্দবাজার পত্রিকায় সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর।
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সরকারি ভাবে স্বীকার করা হল, ক্যানসারই হয়েছে।
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ কেমোথেরাপির প্রথম চক্র সম্পূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে।
১৮ মার্চ ২০১২ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন।
৯ এপ্রিল ২০১২ দেশে ফেরা।
২৫ জুন ২০১২ অনুশীলন শুরু ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে।
১৬ অগস্ট ২০১২ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য এবং বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হল।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ প্রত্যাবর্তন ম্যাচ। চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ কলম্বোয় বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ।
২ অক্টোবর ২০১২ শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ।
ভারতীয় ক্রিকেটমহলের খবর, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য টার্নার চাইবেন। এটা যুবরাজেরও কানে গিয়েছে। তিনি মনে করছেন, টার্নার হলে তাঁর বাঁ হাতি স্পিন আরও কার্যকর হবে। দলের আরও কাজে আসবেন। এমনিতে ৩৭ টেস্টে যুবরাজের বোলিং পারফরম্যান্স মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। মাত্র ৯ উইকেট। কিন্তু ওয়ান ডে বিশ্বকাপও যা পারেনি, কলম্বোর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাই পেরেছে। যুবরাজের বোলিং-আত্মবিশ্বাস দীর্ঘমেয়াদি ফর্ম্যাটের জন্যও পর্যাপ্ত করে দিয়েছে। তিনি যেন নিজেকেই নিজে বলেছেন, ধুর ক্যানসার খেলে ফেললাম। টেস্ট ক্রিকেট কী এমন বড় বোলার!
অন্য বার চণ্ডীগড় রওনা হওয়ার আগে নয়াদিল্লিতে সকালে উঠে বাধ্যতামূলক জগিংয়ের ব্যাপার থাকে। বুধবার তা করতে পারেননি। তাঁর সংস্থা ‘ইউ উই ক্যান’-এর প্রথম এক্সিকিউটিভ বোর্ড মিটিং ছিল। যেখানে সিদ্ধান্ত হল, ইন্ডিয়ান ক্যানসার সোসাইটির সঙ্গে একযোগে তাঁর সংস্থা দিল্লিতে ক্যানসার ডিটেকশন সেন্টার চালাবে। ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য যুবরাজ মোবাইল ভ্যানেরও ব্যবস্থা করছেন। টিম যুবরাজ কলকাতাতেও বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলতে চান। তাঁদের ধারণা, কলকাতায় ক্যানসার নির্ণায়ক চিকিৎসার মাত্রা গণ-হারে মোটেও আশাজনক নয়। কলম্বোর পারফরম্যান্স অবশ্য যুবরাজকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে শেষ দিনের ২১ রান এবং ২-২৩ তাঁকে ভরসা দিচ্ছে মাঠের বাইরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইটাও বাইশ গজের লড়াইয়ের মতোই জেতা যায়। কিন্তু টেস্ট ম্যাচ বরাবরই যুবরাজের প্রিয়তম অভীষ্ট। অধুনা তাঁর মনোভাবের ক্যাচলাইন যেন শাহরুখ খানের নতুন ছবির নামে।
‘যব তক হ্যায় জান!’




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.