|
|
|
|
দরাজ দক্ষিণে স্বামীজির স্মৃতি ছুঁলেন প্রণব |
শঙ্খদীপ দাস • বেলগাঁও (কর্নাটক) |
উত্তর-এর সূত্র এখনও অধরা হলেও স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষে রামকৃষ্ণ মিশনকে একের পর এক দরজা খুলে দিচ্ছে দক্ষিণ।
চেন্নাইয়ে সমুদ্রতটবর্তী বিবেকানন্দ ভবনের লিজের মেয়াদ বাড়িয়ে গত পরশুই ৯৯ বছরের জন্য করে দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। আর আজ বেলগাঁওয়ে কর্নাটক সরকারের দেওয়া জমিতে বিবেকানন্দ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিলান্যাস করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে লাগোয়া বিবেকানন্দ স্মৃতি ভবনের কাজও আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হল।
কোলাপুরের মহারাজার এক সচিবের পরামর্শে ১৮৯২ সালে মহারাষ্ট্র সীমানা লাগোয়া বেলগাঁওয়ে এসে এই বাড়িটিতেই চার দিন ছিলেন স্বামীজি। প্রথিতযশা আইনজীবী সদাশিব বালকৃষ্ণ ভট্ট ছিলেন বাড়ির মালিক। এই বাড়িতে আবার বিভিন্ন সময়ে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, মতিলাল নেহরুও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাত বদল হতে হতে সেই বাড়িটিই যখন ফের বিক্রি হওয়ার উপক্রম, তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে রাজ্য সরকার। ঐতিহ্যপূর্ণ (হেরিটেজ) ভবন হিসেবে চিহ্নিত করে কর্নাটক সরকার গত বছর বাড়িটি অধিগ্রহণ করে। এই বাড়ি এবং তার লাগোয়া এক লপ্তে অনেকটা জমি তুলে দেয় রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের হাতে। |
|
বেলগাঁওয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পিটিআইয়ের ছবি। |
শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এসে আজ রাষ্ট্রপতি বলেন, “গত এপ্রিলে বেলগাঁও ফোর্ট এলাকার অন্য বাসভবনটিতে এসেছিলাম, যেখানে স্বামীজি ৯ দিন ছিলেন। আমরা ভাগ্যবান যে, এমন জায়গা এখনও রয়েছে, যা স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতিসৌধের মতো।”
বেলগাঁওয়ে বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত অন্য বাড়িটির মালিক ছিলেন বনবিভাগের তৎকালীন কর্তা হরিপদ মিত্র। তাঁর সেই বাসভবনে ৯ দিন ছিলেন স্বামীজি। ১২ বছর আগে সেই বাড়িটিও অধিগ্রহণ করে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দিয়েছে কর্নাটক সরকার। বেলগাঁও ফোর্ট এলাকার সেই বাড়ির সামনেই ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রায় পাঁচ কাঠা জমি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে অন্যত্র জমি দিয়ে সরকারের কাছ থেকে সেই জমিটিও পেয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন। কেন্দ্রে প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সেই সমঝোতার প্রক্রিয়া এগোতে সাহায্য করেছিলেন প্রণববাবুই। এর পর অর্থমন্ত্রীর পদে থাকাকালীন ছ’মাস আগে বেলগাঁওয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের ওই প্রধান কেন্দ্রেও গিয়েছিলেন তিনি।
দক্ষিণ ভারতে স্বামীজির স্মৃতি বিজড়িত একের পর ভবন এ ভাবেই রামকৃষ্ণ মিশন হাতে পেলেও উত্তরের ছবিটা আলাদা। বেলগাঁওয়ে স্বামীজির পা রাখার দু’বছর আগের ঘটনা। হৃষীকেশে অসুস্থ হওয়ার পর মেরঠের একটি বাড়িতে তাঁর সতীর্থদের সঙ্গে প্রায় পাঁচ মাসের মতো ছিলেন বিবেকানন্দ। শাস্ত্র পাঠ, আলোচনাচক্র-সহ বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে সেই সময় মেরঠে কাটিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েও মেরঠের সেই বাড়ি এখনও হাতে পায়নি রামকৃষ্ণ মিশন।
মেরঠে স্বামীজির স্মৃতিমাখা বাড়িটি সেনা ছাউনির মধ্যে পড়ে। ঠিক যে ভাবে বেলগাঁও ফোর্টে রামকৃষ্ণ মিশনের সামনের অংশ ছিল সেনা ছাউনির আওতায়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বেলগাঁওয়ে যা সম্ভব হল, তা মেরঠে হচ্ছে না কেন? সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রথমত, মেরঠের বাড়িটি নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। তা ছাড়া সুকনা জমি কেলেঙ্কারির পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আওতায় সব ধরনের জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া এখন স্থগিত রয়েছে। এই বিষয়টি রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি।
রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ চান, মেরঠের ওই বাড়ি এবং জমি একান্তই হস্তান্তর সম্ভব না হলে কেন্দ্রীয় সরকারই সেখানে একটি বিবেকানন্দ স্মৃতি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুক। গড়ে তুলুক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা সমাজ গড়ায় কার্যকরী ভূমিকা নেবে। বস্তুত আজ রাষ্ট্রপতিও একই কথা বলেছেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দকে প্রণববাবু বলেছেন, মেরঠের বাড়ি ও জমির বিষয়ে তিনি যেন অ্যান্টনির সঙ্গে কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি নিজেও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি বলবেন বলে জানিয়েছেন। জমি হস্তান্তরে জটিলতা থাকলে কেন্দ্রের উদ্যোগেই যাতে স্বামীজির স্মৃতিতে কোনও প্রতিষ্ঠান গড়া হয়, সেই কথাই বলা হবে অ্যান্টনিকে। |
|
|
|
|
|