রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এ বার যুযুধান দুই শিবিরের রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গেল। বিধাননগর কলেজ গেটের সামনে সভা করে তৃণমূল বিধায়ক ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা চাঁছাছোলা আক্রমণ করলেন গৌতমবাবুকেই। সমাজ সংস্কারের আগে তাঁর পরিবারে সংস্কার করার পরামর্শও দেওয়া হল সেই সভা থেকে! যার জবাবে গৌতমবাবু সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা পরামর্শ দিলেন, ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে না-গিয়ে রাজ্যের উন্নয়নের কাজে মন দিন! তাঁর ছেলে বলেই সপ্তর্ষি দেবকে যে এই পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে, সেই দাবিও করেছেন গৌতমবাবু।
সপ্তর্ষি-সহ চার এসএফআই কর্মীর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও গাড়ি চাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন বিধাননগর কলেজের ছাত্রী তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেত্রী। এই নিয়েই দুই শিবিরের লড়াই সরগরম। তবে সপ্তর্ষিদের আচরণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ গেটে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ডাকা পথসভা ও বিক্ষোভ সমাবেশে জনা পঞ্চাশের বেশি ছাত্র-ছাত্রী দেখা যায়নি। তার মধ্যে অনেকেই স্থানীয় তৃণমূল ছাত্র-কর্মী। বিধাননগরের টিএমসিপি-র সহ-সভাপতি শুভক্ষণ দত্তের বক্তব্য, “পুজোর ছুটির আগে এমনিতেই কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কম থাকে। পঞ্চাশ জন মানেই এই কলেজে অনেক। ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের পাশেই রয়েছেন।”
সভায় অবশ্য শুধু সপ্তর্ষিকেই নয়, গৌতমবাবু-সহ বাম নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। তাঁর দাবি, “গত কয়েক মাস ধরে রাজ্য জুড়ে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনার পরিকল্পনা করছেন গৌতমবাবুরা!” এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় টিএমসিপি। তার পরে রাজ্যের প্রতিটি কলেজে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করা হবে বলে জানান শঙ্কু। সমাবেশে যোগ দিয়ে বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত মেঠো ভাষায় আক্রমণ করেন গৌতমবাবুকেই।
গৌতমবাবু ‘এবিপি আনন্দ’কে এ দিন বলেছেন, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগের ধারা সাজানোর জন্য মহাকরণ থেকে নির্দেশ যাচ্ছে! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এই সদস্যের কথায়, “সপ্তর্ষির অপরাধ, সে গৌতম দেবের ছেলে! সে কলকাতাতেই আছে। গ্রেফতার হতেও প্রস্তুত।” প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীর আরও দাবি, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে আক্রমণ করার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ও শাসক দল এই কাজ করছে। নিজস্ব ভঙ্গিতে গৌতমবাবুর মন্তব্য, “ব্যক্তিগত আক্রমণে যাবেন না। তার চেয়ে উন্নয়নের কাজে মন দিন! ওঁকে (মমতা) শিল্পটা করতে বলুন!”
তবে ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এই তপ্ত রাজনৈতিক আবহে পুলিশ কিন্তু বিশেষ পদক্ষেপ করেনি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিধায়ক সব্যসাচীবাবু অবশ্য বলেন, “পুলিশের পরিবর্তন না-হলেও সরকারের উপরে আমাদের আস্থা আছে। নিশ্চিত ভাবেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিধাননগরের এক পুলিশ-কর্তার বক্তব্য, তদন্ত চলছে। |
