অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কাল হল মানিকতলার ছিনতাইবাজ পুলিশদের।
নিজেরা পুলিশ হওয়ায় মোবাইলের খুঁটিনাটি ভালই জানে তারা। মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে যে অপরাধী ধরা যায়, তা-ও অজানা ছিল না। তাই সঙ্গীদের বারে বারে সিম বদলে ফোন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছিল মানিকতলা থানার দুই কর্মী সুনীল দাস ও সৌমেন ঝা। কিন্তু সিমের বদলে মোবাইলের আইইএমআই নম্বর (শনাক্তকরণ নম্বর) ধরেও যে অপরাধী ধরা যায়, সেটা মাথায় আসেনি তাদের। মঙ্গলবার তাদের গ্রেফতার করার পরে খোঁজ পাওয়া যায় আর এক পুলিশকর্মীর। তার নাম অরূপ সিংহ। সে দমদম থানার কনস্টেবল।
বুধবার রাতে অরূপের সঙ্গে পঙ্কজ দাস নামে আরও এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর অরবিন্দ সেতুতে চেন্নাইয়ের এক ব্যবসায়ীর গাড়ি থামিয়ে ৪৩ লক্ষ টাকা লুঠের ঘটনায় পুলিশ এ-পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে তিন জন পুলিশকর্মী। ওই লুঠের ঘটনায় অভিযুক্তেরা মোবাইলের সিম পাল্টে পাল্টে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিল। কিন্তু মোবাইল না-বদলানোয় আইইএমআই নম্বরের সূত্র ধরে তাদের হদিস পায় পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “মোবাইল না-বদলানোটাই কাল হল অভিযুক্তদের। তাতেই আমাদের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল।”
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ওই ব্যবসায়ীর টাকা লুঠ করার জন্য দু’দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। প্রথমে ঠিক ছিল, দমদম থানার অরূপই গোটা ‘অপারেশন’ চালাবে। কিন্তু এলাকাটা কলকাতা পুলিশের আওতায়। তাই সুনীল ও সৌমেনকেই ‘দায়িত্ব’ দেওয়া হয়। অরবিন্দ সেতুর ওই এলাকা মানিকতলা থানার অধীন এবং সুনীল-সৌমেনের চেনা। তাই তাদের কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ধৃতেরা জেরায় জানায়, অরবিন্দ সেতুতে ট্যাক্সি নিয়ে লুঠ করার সময় পিছনের একটি টাটা সুমো থেকে অন্য চার দুষ্কৃতী গোটা ঘটনাটা লক্ষ করছিল। সেই গাড়িতেই ছিল দমদম থানার অরূপ। জেরায় সে কবুল করেছে, তারা ঠিক করেছিল, সুনীল-সৌমেনদের প্রথম দলটি টাকা হাতাতে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় দলটি এগিয়ে আসত। তদন্তকারীরা জানান, লুঠের পরে দুষ্কৃতীরা মধ্য কলকাতার একটি জায়গায় জড়ো হয়। সেখান থেকে অন্য গাড়ি ভাড়া করে তারা যায় বেনিয়াপুকুরে। সেখান থেকে তিলজলায় সুরেশ ভৌমিকের (আগেই ধরা পড়েছে) বাড়িতে পৌঁছয়।
পুলিশের দাবি, ওই বাড়িতেই লুঠের টাকা ভাগাভাগি হয়। সুনীল ও সৌমেন পাঁচ লক্ষ করে টাকা পায়। ধৃতদের জেরা করে লুঠের টাকার একাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনার (ইএসডি) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “ওই লুঠের ঘটনায় আগেই ধরা পড়া স্বপন মাইতির বাড়িতে পাওয়া গিয়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা। আরও দু’জনের খোঁজ চলছে।” পুলিশি সূত্রের খবর, মেদিনীপুরে সুনীলের একটি বার-রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেই বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। অরূপের ব্যাপারেও খোঁজখবর চলছে। এর আগে বারাসতে একই ধরনের অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। থানায় গত আট মাস ধরে অনিয়মিত হাজিরা দিচ্ছিল অরূপ। ডিউটির ক্ষেত্রেও তার গাফিলতি ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। |