গাড়িতে চেপে বিধাননগর খালপাড়ের রাস্তা ধরে সেলিমপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন শোভন বসু। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় বিপদ এড়াতে আচমকাই ব্রেক কষেন গাড়ির চালক। টাল সামলাতে না পেরে পিছনের সিট থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়েন শোভনবাবু। বড় দুর্ঘটনা না ঘটলেও ঘাড়ে বেশ ভালই চোট পেয়েছিলেন তিনি।
অনেকটা একই রকম অভিজ্ঞতা দমদমের নিবেদিতা রায়ের। করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডের কাছে জলভর্তি গর্তে অটোর চাকা আটকে যাওয়ায় আহত হয়েছিলেন ওই মহিলা।
শুধু শোভন বা নিবেদিতা নন, বেহাল রাস্তায় দুর্ঘটনা সল্টলেকবাসীর নিত্য দিনের অভিজ্ঞতা। শোভনবাবু বলছেন, “রাস্তার এমন দশা হলে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা উচিত।” একই বক্তব্য স্থানীয় বাসিন্দাদেরও।
বিধাননগরের ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের ধারে রাস্তার একটি বড় অংশের অবস্থা সঙ্গীন। ঠিক একই দশা পিএনবি মোড় থেকে করুণাময়ী পর্যন্ত অংশের। বিদ্যাসাগর মোড় থেকে উইপ্রো মোড়ে যাওয়ার রাস্তাও নানা আকারের গর্তে ভরা। করুণাময়ীর রাস্তায় জখম হওয়া নিবেদিতার কথায়, “এ সব রাস্তায় যে কোনও সময়েই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।” এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, “ই এম বাইপাস থেকে ইই ব্লকের রাস্তায় যে ভাবে গর্ত বাঁচিয়ে চলতে হয়, তা কল্পনা করাও দুষ্কর।” বিধাননগর এলাকার অন্য রাস্তাগুলির হালও বিশেষ ভাল নয়। হাম্পগুলিও অনেক জায়গায় ভেঙেচুরে গিয়েছে। সেগুলি থেকেও বিপদ ঘটতে পারে। |
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাই সল্টলেকের রাস্তার হাল খারাপ হওয়ার জন্য দায়ী। মেট্রোর কাজ এবং রাস্তা মেরামতি করার পরে বেশির ভাগ রাস্তাই আর ঠিক করা হয়নি। যেমন ৪ নম্বর ট্যাঙ্ক থেকে সেন মহাশয় বাসস্টপ পর্যন্ত রাস্তার একটি অংশে সরকারি কাজের জেরে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছিল। কাজ শেষ হয়ে কয়েক মাস পার করেও সেই রাস্তা পুরোপুরি মেরামত হয়নি। একটি লেন দিয়েই দু’দিকের গাড়ি চলাচল করছে। এখানেই রাস্তা পেরোতে গিয়ে গর্তে পড়ে আহত হন এক পথচারী। অন্য দিকে, মেট্রোর কাজের জন্য তুলে দেওয়া হয়েছিল বিদ্যাসাগর আইল্যান্ড ও সিটি সেন্টার আইল্যান্ড। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তা আর তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে ওই মোড়গুলিও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তা বেহাল হয়ে থাকার পরে অবশেষে টনক নড়েছে প্রশাসনের। ফি বছরের মতো এ বারও পুজোর আগে রাস্তায় তাপ্পি মারার কাজ শুরু করেছে পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বেহাল রাস্তার তালিকাও তৈরি করা হয়েছিল। বর্ষার কারণেই কাজ করা যায়নি। পুলিশ-প্রশাসনও কয়েকটি রাস্তা দ্রুত মেরামতির জন্য পুর-প্রশাসনকে আবেদন করেছিলেন।
পুজোর দিন কয়েক বাকি। তার মধ্যে কি সব রাস্তার মেরামতি সম্ভব?
বাসিন্দাদের এক সংগঠন ‘বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধুর অভিযোগ, “সব রাস্তা তো দূর অস্ত্, খালপাড়ের রাস্তা মেরামতিই চার বছরে শেষ হল না। উপরন্তু বৃষ্টি। সরকারি দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই এই অবস্থা।” যদিও পুরসভার দাবি, পুজোর আগেই মেরামতির কাজ শেষ হয়ে যাবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, বিধাননগরের কিছু রাস্তা নগরোন্নয়ন দফতর ও কেএমডিএ-র অধীন। বাকিগুলি পুরসভার। তাই রাস্তা মেরামতি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তবে সম্প্রতি সেই জটিলতা মিটে গিয়েছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “খারাপ হয়ে যাওয়া রাস্তাগুলির মেরামতি শুরু হয়েছে। দ্রুতই সে কাজ শেষ করা হবে। মেরামতির জন্য আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করা ছিল। মেট্রো-কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকায় রাস্তা মেরামতির কাজ করছেন।”
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কার মেরামত করার কথা, তা নিয়ে সময় নষ্ট না করে দ্রুত কাজ করতে হবে।” তিনি এর আগেই বলেছিলেন, “পুর-এলাকায় রাস্তা মেরামত পুরসভাই করবে। আর্থিক সমস্যা থাকলে সরকার সাহায্য করবে।” |