আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কয়লার সরবরাহ সমস্যা মেটার আশা নেই। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কলকাতায় ফিনান্সিয়াল জার্নালিস্টস ক্লাব এবং অ্যাসোচ্যাম আয়োজিত আলোচনাসভায় বিভিন্ন বক্তার কথা থেকে এই চিত্রই স্পষ্ট হয়েছে।
দেশের বৃহত্তম কয়লা উৎপাদক সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস নরসিংহ রাও জানালেন, দ্বাদশ পরিকল্পনায় কোল ইন্ডিয়া অতিরিক্ত ১৮ কোটি টন উৎপাদন করবে। কিন্তু অ্যসোসিয়েশন অফ পাওয়ার প্রডিউসার্সের ডিরেক্টর জেনারেল অশোক খুরানার বক্তব্য, ওই সময়ের মধ্যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়বে ৫০ হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ বর্তমানে যা ১ লক্ষ ৬ হাজার মেগাওয়াট, তা ওই সময়ে দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার মেগাওয়াটে।
ফলে ঘাটতি কী দাঁড়াবে? এখন চাহিদার তুলনায় কয়লা সরবরাহে ঘাটতি ৯ কোটি টন। কোল ইন্ডিয়ার উৎপাদন ৮% হারে বৃদ্ধি পেলে ও বিদ্যুৎ সংস্থার নিজস্ব কয়লা খনিগুলি থেকে ১০ কোটি টন উৎপাদন সম্ভব হলেও দ্বাদশ পরিকল্পনা শেষে ওই ঘাটতি বেড়ে বছরে ২০ কোটি ৮০ লক্ষ টনে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য খুরানার। |
সভায় অশোক খুরানা, নরসিংহ রাও, মলয় দে, রবীন্দ্রনাথ সেন
ও ডি এস রাওয়াত (বাঁ দিক থেকে)। —নিজস্ব চিত্র |
এ সমস্যা সমাধানের উপায় কী? বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলির মতে, কয়লা আমদানি করে পূরণ করা হোক ওই ঘাটতি। কোল ইন্ডিয়াও সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে যে, প্রয়োজনে আমদানি করেই বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে জোগান দেওয়া হবে। কিন্তু আমদানিকৃত কয়লার দাম দেশীয় কয়লার তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি। ওই দামে কয়লা কিনে লাভজনক অবস্থায় সংস্থা চালানো কঠিন, মত বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলির। এই সমস্যার সমাধানে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব এসেছে যে, দেশে উৎপাদিত কয়লার দাম কিছুটা বাড়িয়ে আমদানি করা কয়লায় ভর্তুকি দেওয়া হোক।
আর এই প্রস্তাবেরই ঘোর বিরোধিতায় অনুষ্ঠানে সরব হলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিব মলয় দে। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “সাধারণ মানুষের থেকে বেশি দাম নিয়ে বিদ্যুৎ সংস্থাকে ভর্তুকি দেওয়া আমাদের মতো দেশে সম্ভব নয়। এটা বাজার অর্থনীতিরও বিরোধী।” মলয়বাবু বলেন, “উদ্যোগপতিরা যখন বিদ্যুৎ কারখানা স্থাপন করছেন, তখনই তো জানেন কয়লার সরবরাহের অবস্থা। তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে লগ্নি করলে দায় তাঁদেরই।”
পাশাপাশি এ দিন বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির দাবিকেও এক কথায় উড়িয়ে দেন মলয়বাবু। কারণ সারা দেশে বর্তমান দামে বিদ্যুৎ কেনার লোকেরই অভাব রয়েছে বলে মত তাঁর। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের রাজ্যে যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তা অন্য রাজ্যে বিক্রি করতে পারি না। কারণ, সেখানেও চাহিদা নেই। তাই অনেক সময়েই উৎপাদন ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা হয় না। বিদ্যুৎ বিপণনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একটা বড় বিষয়।” দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন বাজার ভিত্তিক বিদ্যুৎ মাসুল চালুর পক্ষে সওয়াল করেন। কয়লা সরবরাহ বাড়াতে তাঁর পরামর্শ, “পরিত্যক্ত খনিগুলি থেকে ফের উৎপাদন শুরুর ব্যবস্থা করার কথা ভেবে দেখা উচিত। বর্তমানে কয়লার দাম বাড়ার ফলে ওই সব খনি থেকে উৎপাদন লাভজনক হবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
কয়লা উৎপাদন বাড়াতে পরিবেশ এবং বন দফতর-সহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সায় দ্রুত পাওয়া জরুরি বলে এ দিন মন্তব্য করেন অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত। তিনি বলেন, “বিভিন্ন অনুমোদন পেতে একজানলা ব্যবস্থা চালু-সহ একগুচ্ছ প্রস্তাব অ্যাসোচ্যাম কেন্দ্রকে দিয়েছে।”
সভার শুরুতে ফিনান্সিয়াল জার্নালিস্টস ক্লাবের পক্ষ থেকে অতিথিদের স্বাগত জানান ক্লাবের সভাপতি জয়ন্ত সরকার। শেষে ধন্যবাদ জানান অ্যাসোচ্যামের পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের কো-চেয়ারম্যান দেবমাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়। |