হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর উৎপাদন পুজোর মধ্যে বন্ধ রাখা হতে পারে। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, প্রকল্পের যা অবস্থা, তাতে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েক দিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মুখ্যসচিবের কাছে চার মন্ত্রীকে নিয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি সংস্থার ভবিষ্যৎ ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। একই সঙ্গে পার্থবাবু মনে করিয়ে দেন, রাজ্য সরকারের ঘোষিত অবস্থান, ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়।
আজ, শুক্রবার সংস্থার হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শিল্প দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন পার্থবাবু। তিনি বলেন, “আর্থিক কারণে নয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে।” প্রসঙ্গত ২০১১-১২ সালে রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মী অসন্তোষ-সহ নানা কারণে এগারো বার প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
আইনি বিবাদ ও আর্থিক অনটনে জর্জরিত রাজ্যের ‘শো-পিস’ প্রকল্প হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস চলতি বছরেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে পড়েছিল। গত মে মাসে আর্থিক সঙ্কট এতটাই গভীর হয় যে, ন্যাপথা কেনার টাকায় টান পড়ে। সেই পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজন ছিল ৩০০ কোটি টাকার। সামান্য হলেও কিছু ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ায় উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হয়।
ব্যবসায়িক মহলের মতে, রাজ্যের শো-কেস প্রকল্প থেকে আর্থিক দায়ভার মুক্ত হওয়ার পথ খুঁজতেই চার মন্ত্রীকে নিয়ে বিশেষ কমিটি তৈরি হয়েছে। রাজ্য আগেই জানিয়েছে, সংস্থা চালানোর ক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকা হ্রাস করার পক্ষপাতী তারা। বর্তমানে রাজ্য সরকারের ঘোষিত অবস্থান হল, হলদিয়ার শেয়ার নিলামে তোলা হবে। যদিও এই অবস্থান সংস্থার ‘আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন’-এর বিরোধী বলে দাবি করে আসছে সংস্থার অন্যতম অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। অর্থাৎ সংস্থা তৈরির সময় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, শেয়ার নিলাম করলে সেই চুক্তির খেলাপ করা হবে বলে দাবি তাদের। তবে পার্থবাবু এ দিনও বলেন, “ব্যবসা চালানো আমার কাজ নয়। আমরা হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর মালিকানা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।”
গত চার বছর ধরে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লোকসানে চলছে। সব মিলিয়ে লোকসানের বহর প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। ব্যাঙ্কগুলি রাজ্য সরকারকে সাফ জানিয়েছে, সংস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের আরও সক্রিয় ভূমিকার পাশাপাশি নতুন পুঁজির সংস্থানও করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সংস্থার দুই প্রধান অংশীদার, চ্যাটার্জি গোষ্ঠী এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে যে কোনও এক পক্ষ বা দু’পক্ষই এক যোগে টাকা ঢালতে পারে। কিন্তু আইনি বিবাদের জেরে সেই লগ্নি করতে এগোচ্ছে না কোনও পক্ষই। একই কারণে ইন্ডিয়ান অয়েল বা ওএনজিসি-র শাখা সংস্থা ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারিজকে বিনিয়োগকারী হিসেবে টানার চেষ্টাও সফল হয়নি।
এই বেহাল দশার মধ্যেই ঋণ ও বিমার প্রিমিয়াম বাবদ ১৩৩ কোটি টাকা সংস্থাকে দ্রুত মেটাতে হবে। সংস্থা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তারা ৬০ কোটি টাকা মিটিয়েছে। |