গ্যারেজ কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তুলে বেসরকারি সংস্থাকে নিগমের বাস দেখভাল ও মেরামতের দায়িত্ব দিলেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি) কর্তৃপক্ষ। নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে কোচবিহার নিউ বাস স্ট্যান্ডের ৪১টি বাস বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে মেরামতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাসগুলি তাঁদের দেখে রাখতে হবে। এ জন্য প্রতি মাসে বাস পিছু ১ হাজার ১০০ টাকা দেওয়া হবে। ফলে নিগমকে মাসে ৪৫ হাজার টাকার বাড়তি খরচের বোঝা নিতে হচ্ছে। এনএসটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগণ বলেন, “সংস্থার স্বার্থে গত মঙ্গলবার থেকে বেসরকারি সংস্থাকে বিকল বাস মেরামত ও দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়।” এনবিএসটিসি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গ্যারেজ কর্মীদের একাংশের কজে দক্ষতা না থাকায় সময় মত বাস মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বর মাসে নিগমের কোচবিহার বিভাগের রোজগার কমে যাওয়ার কারণ জানতে হিয়ে বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। শুক্রবার একদল ইঞ্জিনিয়র নিয়ে সটান নিউ বাসস্ট্যাণ্ডে হাজির হন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। দক্ষতা জানতে দুই কর্মীকে তাঁরা বিকল বাসের যন্ত্রাংশ খুলে মেরামত করে লাগাতে বলেন। সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আধিকারিকরা অপেক্ষা করলেও কর্মীরা সেটা করতে পারেননি বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পরে বাসস্ট্যান্ড থেকে রুটিন রুট বাতিলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, “আমি ওই গ্যারাজে গিয়ে কেন নির্দিষ্ট রুটে বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না সেটা খতিয়ে দেখেছি। তাই বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।” এন বিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সংস্থার কোচবিহার বিভাগে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা রোজগার কমেছে। অথচ একই সময়ে বহরমপুর ও রায়গঞ্জ বিভাগে আয় বেড়েছে। অভিযোগ, ওই সমস্যার অন্যতম কারণ গ্যারাজ কর্মীদের একাংশের কাজে দক্ষতা না থাকায় বিকল বাস মেরামত করে সময় মতো রুটে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। অথচ দিনে ১২টি বাস চালালে প্রতি বাসে ৩ হাজার টাকার টিকিট বিক্রির সুযোগ রয়েছে। এটা হলে মাসে দশ লক্ষাধিক টাকা রোজগার বাড়বে। নিগমের কোচবিহার নিউ বাসস্ট্যান্ডে বাস মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার তরফে পুলক দে বলেন, “আপাতত এক মাসের জন্য ৪১টি বাস চুক্তির ভিত্তিতে রুটিন পরীক্ষা ও মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে।” নিগম কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ফলে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও গ্যারেজের কর্মীরা জানান, নতুন মডেলের বাস মেরামতের কোনও প্রশিক্ষণ তাঁদের দেওয়া হয়নি। ওই কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সিটুর এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্ত বলেন, ‘‘নতুন বাসের মডেল অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হলে ওই সমস্যা হত না। বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে স্থায়ী সমাধান হতে পারে না।” যদিও তৃণমূল প্রভাবিত ড্রাইভার্স অ্যান্ড শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, বাম শাসনকালে দলীয় কর্মীদের কাজ দিতে গিয়ে বড় অংশের দক্ষতা যাচাই করা হয়নি। তাই ওই সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এত দিন বিষয়টি আড়াল করা হয়েছে। ফলে সংস্থার লোকসান ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে।” |