প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব। এক্স-রে, ইসিজি বা প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। অথচ, জঙ্গলমহলের এই গ্রামীণ হাসপাতাল ঘিরে স্থানীয় মানুষের প্রত্যাশা অনেক। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যে এই প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব গৃহীত হলে অন্তত ৫০টি শয্যা বাড়বে এখানে। সঙ্গে মিলবে আরও কিছু পরিষেবা। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই হাসপাতালে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। তারমধ্যেই কাজ করা হচ্ছে।” একই বক্তব্য ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপনকুমার ব্যাপারির। তিনি বলেন, “স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত হলে তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন। প্যাথলজি বিভাগ থাকবে। এর ফলে স্থানীয় মানুষ উপকৃত হবেন।”
সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে এসেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের এক প্রতিনিধি দল। চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের নেতৃত্বে দলটি বিনপুর, বেলপাহাড়ি ও ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল ঘুরে দেখে। কী কী সমস্যা রয়েছে, আপাতত কী কী পরিষেবা চালু করা প্রয়োজন, সবই খতিয়ে দেখা হয়। এই প্রতিনিধি দলের কাছেও বেশ কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। জানানো হয়েছে, এই তিনটি হাসপাতালেই কর্মী প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিনপুরে ইসিজি চালু করা দরকার। শয্যা অন্তত ৩০টি বাড়ানো প্রয়োজন। ঝাড়গ্রামে আইটিইউ চালু করা প্রয়োজন। আগে বেলপাহাড়িতে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর দ্রুত এটিকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। ১৫ শয্যার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে লাগোয়া নব-নির্মিত একটি ভবনে স্থানান্তর করে ৬০ শয্যার গ্রামীণ হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের অবশ্য অভিযোগ, গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হলেও পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েই গিয়েছে। ৬০ শয্যার গ্রামীণ হাসপাতালে তিন জন বিশেষজ্ঞ-সহ মোট ৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা। বেলপাহাড়িতে আছেন সাধারণ ৪ জন চিকিৎসক।
আগে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৫ শয্যার হলেও গড়ে ১৫০-২০০ জন রোগীকে ভর্তি নিতে বাধ্য হতেন কর্তৃপক্ষ। খাটিয়া ভাড়া নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে এবং বাইরে গাছতলায় রোগীদের চিকিৎসা হত। স্থানীয় কিছু ব্যক্তিই রোগীদের খাটিয়া ভাড়া দিয়ে রোজগার করতেন। এখনও গ্রামীণ হাসপাতালে প্রায় ২০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। ফলে শয্যা না পেয়ে অনেকে মেঝেতে থাকতে বাধ্য হন। তবে খাটিয়ার ব্যবহার বন্ধ করতে তৎপর হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “এখন নতুন হাসপাতালের কাছে আর খাটিয়া থাকে না।” এই গ্রামীণ হাসপাতালে নেই-এর তালিকাটা দীর্ঘ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। শিশু বিভাগ নেই। সদ্যোজাতদের পৃথক রাখার ব্যবস্থা নেই। এক্স-রে মেশিন নেই। জঙ্গলমহল এলাকার এই হাসপাতালের উপর আশপাশ এলাকার অনেকেই নির্ভর করেন। হাসপাতালে যে এই সব পরিষেবা থাকাটা জরুরি, তা মানছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। তবে দফতরের ওই আধিকারিকের বক্তব্য, “শুধু বেলপাহাড়িতে নয়, অন্য গ্রামীণ হাসপাতালেও এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। এই সব সমস্যার সমাধানে সব রকম চেষ্টা চলছে।” তাঁর কথায়, “সমস্যার কথা আমাদের অজানা নয়, বর্ষাকালে তো বেলপাহাড়িতে রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্য কখনও কখনও রোগীতে ঝাড়গ্রামে রেফার করতে হয়। তবে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত হলে আর এই সব সমস্যা থাকবে না।” |