পিজি-তে পড়ে বিশ লক্ষের ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স
যেন অনেকটা নটে গাছ মুড়নোর গল্পের মতো। নটে কেন মুড়লো, তার কারণ খুঁজতে খুঁজতে শেষমেশ পৌঁছনো গেল শিকড়ে। এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে একটি আধুনিক ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স কেন স্রেফ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, কেনার পরে অ্যাম্বুল্যান্সটির রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। কারণ, কলকাতায় পরিবেশগত কারণে যে মাপকাঠির গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা হয়, এটি সেই মাপকাঠি মেনে কেনাই হয়নি। কেন হয়নি, তার কোনও ব্যাখ্যাও কারও কাছে নেই।
আর তাই বিশ লক্ষের অ্যাম্বুল্যান্স হাসপাতাল চত্বরে পড়ে রয়েছে ছ’মাস ধরে। কিন্তু সেটা চালানো যাচ্ছে না। মুমূর্ষু রোগীরা কাতরাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁদের অন্যত্র পাঠাতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ, তেমন কোনও পরিবহণের ব্যবস্থাই হাসপাতালে নেই। হাসপাতাল চত্বর জুড়ে অকেজো অবস্থায় পড়ে থেকে থেকে ছ’মাসে দু’বার অ্যাম্বুল্যান্সটি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সারানোর জন্যও ব্যয় হয়ে গিয়েছে বহু টাকাও। তবু অ্যাম্বুল্যান্সটি নড়ানোর ব্যবস্থা করা যায়নি।
এসএসকেএম তথা ‘ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইপিজিএমইআর)-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “আমরা এ বিষয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে। সমস্ত কাগজপত্র স্বাস্থ্য-পরিবহণ বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা-ও এত দিনে কেন অ্যাম্বুল্যান্সের রেজিস্ট্রেশন হল না, জানি না। পড়ে থেকে থেকে এত দামি একটা জিনিস স্রেফ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ থাকাকালীন তাঁর তহবিল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুল্যান্স কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। নানা প্রক্রিয়া পেরিয়ে ছ’মাস আগে সেই অ্যাম্বুল্যান্স এসে পৌঁছয় হাসপাতালে। উদ্বোধনের দিনক্ষণ স্থির হয়ে যাওয়ার পরে জানা যায়, রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। কেন হয়নি? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এটা স্বাস্থ্য পরিবহণ বিভাগের দায়িত্ব। তাই কারণটা তারাই বলতে পারবে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “গয়ংগচ্ছ মনোভাব কোন স্তরে গেলে এমনটা হওয়া সম্ভব, এই ঘটনাটি সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে।”
স্বাস্থ্য পরিবহণ দফতরের কর্তা পার্থসারথি পাল বলেন, “এই অ্যাম্বুল্যান্স ভারত স্টেজ-থ্রি ক্যাটেগরির। এ শহরে শুধু ক্যাটেগরি ফোর-এর গাড়িই ছাড়পত্র পায়।” তা হলে কেনার সময়ে তা ভাবা হয়নি কেন? তিনি বলেন, “বিষয়টা হয়তো কারও খেয়াল ছিল না। কোনও ভাবে ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলব।”
কী সেই ব্যবস্থা? পার্থবাবু বলেন, “কলকাতায় যেহেতু রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না, সেই কারণে আমরা হুগলি থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে আনার কথা ভাবছি। গাড়ির নম্বর পেয়ে গেলে চালানোর ক্ষেত্রে আর কোনও সমস্যা থাকবে না।” তা হলে এত দিন তা ভাবা হল না কেন? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তরও তিনি দিতে পারেননি।
এসএসকেএম হাসপাতালের এক কর্তা বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরেও যে ভাবে নির্বিচারে রোগী প্রত্যাখান চলছে, তা থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, উপরের স্তরে যতই সদিচ্ছা থাক না কেন, তৃণমূল স্তরে কাজ করার ইচ্ছা না থাকলে পরিস্থিতি বিশেষ বদলায় না। অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যাপারটাও তেমনই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.