কানে ইয়ারপ্লাগ লাগিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। তাই ফোনটা যে বাজছে, শুনতেই পাননি তিনি। বললেন, বৌয়ের কনুইয়ের গোঁতায় টের পেলাম, ফোন এসেছে। রিসিভারটা কানের কাছে ধরতেই হতবাক হার্ভার্ড হিউস মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষক রবার্ট লেফকোভিৎজ। রসায়নে নোবেল যে এ বার তাঁরই মুঠোয়।
রবার্টের সঙ্গে এই কৃতিত্বের অংশীদার আরও এক মার্কিন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ব্রায়ান কোবিলকা। দু’জনেই এ বারে রসায়নে নোবেলজয়ী। কোষের ভিতর ‘জি-প্রোটিন-কাপলড’ রিসেপটর বা গ্রাহক (জিপিসিআর) কী ভাবে কাজ করে, আর তাতে কী ভাবেই বা রাসায়নিক খবর এক কোষ থেকে অন্য কোষে পৌঁছয় সেটাই তাঁদের আবিষ্কার। ‘দ্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর মতে, রবার্ট এবং ব্রায়ানের আবিষ্কারটা যুগান্তকারী। জিপিসিআর হল এমন এক ধরনের গ্রাহক প্রোটিন যার সাহায্যে একটি কোষের পর্দা থেকে পড়শি কোষের পর্দায় সংবেদন (গন্ধ, স্বাদ বা কোনও কিছু দেখার অনুভূতি) পৌঁছে যায়।
|
রবার্ট লেফকোভিৎজ |
|
ব্রায়ান কোবিলকা |
কোষের বাইরের বিভিন্ন অণু যেমন, আলোক সংবেদী যৌগ, হরমোন, ফেরোমোন বা নিউরোট্রান্সমিটার ‘জি-প্রোটিন-কাপলড’ গ্রাহকের মাধ্যমে এক কোষ থেকে অন্য কোষে বাহিত হয় সিগনাল ট্রান্সডাকশন পদ্ধতিতে। এই অণুগুলি গ্রাহকটিতে জুড়ে গেলেই, সেটি তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবং তার পর সেই অনুভূতি সে এক
কোষ থেকে অন্য কোষে ছড়িয়ে দেয়। এ সব কথা আগেই জানা ছিল। কিন্তু ঠিক কোন পথে এই অনুভূতি কোষ থেকে কোষে বাহিত হয় বা এ সময় গ্রাহক প্রোটিনে ঠিক কোন কোন পরিবর্তন হয়, তা এত দিন জানা ছিল না। আর সেই বিষয়েই গবেষণা করেছিলেন রবার্ট। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোনের জন্য এই গ্রাহকটা যেন কোষের প্রধান ফটক।” কারণ, ওই অণুগুলি যদি সঠিক গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত না হয়, তা হলেই উদ্দেশ্য বিফলে। এক কোষ থেকে অন্য কোষে যাওয়ার উপায় নেই।
রবার্ট ও ব্রায়ানই এত বিশদে চেনাল ‘জি-প্রোটিন-কাপলড’ গ্রাহককে। বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মের অন্যতম ভূমিকায় রয়েছে জিপিসিআর। তাই বিভিন্ন রোগের সঙ্গেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত এই গ্রাহক। যেমন, স্নায়ুতন্ত্রের অসুখ, হৃদরোগ এমনকী পরিপাকক্রিয়ার গণ্ডগোলও। এত দিন জানাই ছিল না, গ্রাহকটা ঠিক কী ভাবে কাজ করে। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনও ওষুধও ছিল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বারের নোবেলজয়ীরাই পথ দেখিয়ে দিলেন।
কী ভাবে এত কিছু জানলেন রবার্টরা?
গ্রাহক প্রোটিনকে ধাওয়া করতে রবার্ট প্রোটিনের সঙ্গে আটকে থাকা হরমোনের গায়ে তেজস্ক্রিয় আইসোটাইপ জুড়ে দেন। লক্ষ্য ছিল, কোষ পর্দার মধ্যে দিয়ে সঙ্কেত পাশের কোষে চলে যায়।
নোবেল কমিটির সাইটে রবার্ট এবং ব্রায়ানের উদ্দেশে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা। ‘অভিনন্দন’, ‘দারণ কাজ করেছেন’, ‘অসাধারণ...’ এমন আরও কত কী। উচ্ছ্বসিত ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমী’-র প্রবীণ বিজ্ঞানী সমীর ভট্টাচার্যও। বললেন, “প্রোটিনের সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি। সেখানে রবার্ট এবং ব্রায়ানের প্রোটিন নিয়ে এমন একটা আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানে খুবই উল্লেখযোগ্য।”
কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন যাঁরা, কী বলছেন তাঁরা? রবার্ট বলেন, “মনে হচ্ছে দিনটা খুব চাপের যাবে। ভেবেছিলাম চুলটা কাটব। দেখলে বুঝবেন আজ চুল কাটা কত জরুরি ছিল। মনে হচ্ছে, আজ আর তা হল না। |