প্রেমের ফাঁদে ফেলে শিলিগুড়ির বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির পাঁচ ছাত্রীকে পাচারের ছক কষে ডুয়ার্সের হ্যামিল্টনগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। বুধবার অভিযুক্ত এক যুবকের মোবাইলের সূত্র ধরে কালচিনি থানার হ্যামিল্টনগঞ্জ থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। ভক্তিনগর থানা এলাকার বাসিন্দা ওই পাঁচ ছাত্রী মঙ্গলবার সকালে স্কুলে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, ওই কিশোরীদের সঙ্গে আরও দুই ছাত্রী ছিল। তারা সেখান বাড়ি ফিরে যায়। প্রত্যেকেই শিলিগুড়ির বিবেকানন্দ স্কুলের ছাত্রী।
শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ও জি পাল বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’’ জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “ওই ছাত্রীরা হ্যামিল্টনগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় অভিযুক্ত একজনের নাম আমরা পেয়েছি। গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, কোচবিহার, ডুয়ার্স এবং দার্জিলিঙের একটি নারী পাচার চক্র ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, কিছুদিন আগে চিলাপাতায় ঘুরতে গিয়ে কোচবিহারের পাতলাখাওয়ার এক যুবকের সঙ্গে এক ছাত্রীর পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই যুবক। ওই দিন তাঁদের ডুয়ার্সে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার ছক কষে অভিযুক্ত। তাঁর সঙ্গ দেয় বাগডোগরার আরও দুই যুবক। স্কুলে যাওয়ার নাম করে চার ছাত্রী তাঁদের এক বান্ধবীর বাড়িতে জড়ো হয়। তাঁর মা-বাবা বাড়িতে ছিলেন না। সেখানে স্কুলের পোশাক বদলে তাঁরা সায়েন্স সেন্টারের দিকে রওনা হয়। সেই সময় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আরও দুই ছাত্রী স্কুলে যাচ্ছিল। তাঁরাও ওই ছাত্রীদের সঙ্গে সায়েন্স সেন্টারে যায়। সেখানেই অভিযুক্ত দুই যুবক ছিল। তারা ওই ছাত্রীদের নিয়ে টাউন স্টেশনে গিয়ে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে চাপিয়ে হ্যামিল্টনগঞ্জে নিয়ে যায়। সেখানে মানসিক ভাবে অসুস্থ নেহার এক পিসির বাড়িতে ছিল তারা।
এদিন সকালে বিবেকানন্দ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ মুখোপাধ্যায় সপ্তম শ্রেণির অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তিন যুবকের নাম জানতে পারে। ওই দিন আরও যে দুই ছাত্রী তাদের সঙ্গে সায়েন্স সেন্টারে তারা ঘটনাটি অভিবাকদের জানিয়ে দেয়। এর পরেই ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্তের মাধ্যমে পুলিশের কাছে ওই খবর পৌঁছয়। পুলিশ অভিযুক্ত এক যুবকের মোবাইল নম্বর জেনে যায়। তার সূত্রে ছাত্রীদের হদিশ পেয়ে যায়। দুলালবাবু বলেন, “কম বয়সী কিশোরীদের ফুঁসলিয়ে বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার একটি চক্র ওই ঘটনার পিছনে রয়েছে। ওই ছাত্রীদের নানারকম টোপ দেখিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় সে ব্যপারে পুলিশকে বলেছি।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “অভিযুক্তরা পালিয়ে গিয়েছে বলে শুনেছি। তাদের গ্রেফতার করে যাতে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয় সে দাবি রাখছি।” ছাত্রীদের সঙ্গে কোনও খারাপ আচরণ করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। |