চাল উৎপাদনে ঘাটতির আঁচ পেয়ে মরসুমের সূচনাতেই ফাঁপরে পড়েছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় ‘দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব’-এর বরাদ্দ ৭২ কোটি টাকার কোনও হিসেব পাচ্ছে না কৃষি দফতর। মিলছে না চারটি প্রকল্পের খরচের সবিস্তার তথ্যও। শেষ পর্যন্ত
কৃষিমন্ত্রীকে ওই টাকার গরমিলের কারণ অনুসন্ধান করে রিপোর্ট চাইতে হয়েছে।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পূর্ব ভারতে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লব কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের আওতায় রয়েছে অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ় এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশ। গত বছর এ রাজ্যে সবুজ বিপ্লব কর্মসূচি চালু হয়েছে। গত আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় বাজেটে সবুজ বিপ্লবের জন্য পশ্চিমবঙ্গে বরাদ্দ ছিল ৭২.২০ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে তা বেড়ে হয়েছে ২৬৯ কোটি টাকা। এ রাজ্যের ১১টি জেলায় ধান এবং ১৫টি জেলায় গম উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ওই অর্থ দিয়ে উন্নত মানের বীজ কেনার সঙ্গে সঙ্গে সেচের উন্নয়ন এবং
|
রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য |
কৃষকদের সার ছাড়া বাকি খরচ দেওয়ার কথা ওই দফতরেরই। কিন্তু গত বছর কৃষি দফতর কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ৭২ কোটি টাকা কীসে খরচ করেছে, তার সবিস্তার হিসেব মিলছে না। দফতরের এক কর্তার কম্পিউটারে সেই তথ্য ছিল। কিন্তু ওই কর্তার বদলির পরে তাঁর কম্পিউটারে সেই তথ্য আর মিলছে না।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বুধবার মহাকরণে বলেন, “সবুজ বিপ্লবে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অর্থের হিসেব ঠিকমতো রাখা হয়নি।
দফতরের লেজার বুকেও সেই খরচ ঠিক ভাবে লেখা হয়নি। আমি সতর্ক আছি। দফতরের কাছে সবিস্তার হিসেব চেয়ে পাঠিয়েছি।”
হিসেবে গরমিলটা কী ধরনের?
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “সবিস্তার হিসেব না-পাওয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। কৃষি দফতরের সব বিভাগেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ধাপে ধাপে কত টাকা এসেছে এবং তা কোথায় খরচ হয়েছে, তার হিসেব চেয়ে পাঠাব।” চলতি বছরে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব কর্মসূচিতে বরাদ্দ অর্থে মূলত চার ধরনের প্রকল্প-ভিত্তিক কাজ করবে কৃষি দফতর।
• বিভিন্ন জায়গায় হাজার হেক্টর করে জমি বেছে নিয়ে চাষিদের উন্নত ধরনের বীজ, প্রযুক্তি, সার এবং চাষের খরচ জুগিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে। এই খাতে ১৩৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
• স্থায়ী সম্পদ তৈরি করা হবে। এই খাতে খরচ হবে প্রায় ৮১ কোটি টাকা। মূলত কৃষি-বাজার ও অন্য স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরিতে এই অর্থ খরচ করা হবে।
• ৫৩ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে চাষিদের সাব-মার্সিবল পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য। রাজ্য সরকার পাঁচ অশ্বক্ষমতার পাম্প চালাতে আগাম অনুমতির পুরনো বিধি ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তার ফলে সেচের কাজে ব্যাপক হারে জল তোলা হবে। ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে জল তোলার পাম্প চালানোর উপরে জোর দিতে চাইছে কৃষি দফতর।
• ন’কোটি টাকা খরচ করা হবে চাষিদের ফসফেট ও পটাশ জাতীয় সার জোগানোর জন্য। অন্যান্য সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা ইউরিয়া ও নাইট্রোজেন দিয়ে ধান চাষ করছেন। বেশি দামের পটাশ ও ফসফেট জাতীয় সার যাতে বিনা পয়সায় দেওয়া যায়, সেই জন্য সবুজ বিপ্লবের বরাদ্দ থেকে এই অর্থ বরাদ্দ করা হবে। |