পুলিশি আপত্তি উপেক্ষা করে পুর-সমাবেশ করে বামফ্রন্ট সুর চড়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের দিকে পাল্টা আক্রমণ ধেয়ে এল। আক্রমণে নামলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন কলকাতা পুরসভায় নানা দুর্নীতি চলছে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়েরা বেনিয়মে যুক্ত বলে অভিযোগ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেই অভিযোগের সরাসরি জবাব না-দিয়ে শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যবাবুকে স্বাস্থ্য দফতর সংক্রান্ত দুর্নীতিতে জেলে ভরার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির (এফডিআই) বিরোধিতায় বুধবার ব্র্যাবোর্ন রোডে প্রতিবাদ-সভা ছিল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র উদ্যোগে। সেই সভা-মঞ্চ থেকেই পার্থবাবু বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বেশি বড় বড় কথা বলবেন না! স্বাস্থ্য দফতরের এক একটা ফাইল বার করলে সারা জীবন আপনাকে জেলে কাটাতে হবে!” মন্ত্রী থাকাকালীন সূর্যবাবু ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীর নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খুলেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন পার্থবাবু। সরকারি সুবিধা নিয়ে অভিজাত এলাকায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সস্তার ফ্ল্যাটে থাকেন বলেও শিল্পমন্ত্রীর অভিযোগ। তাঁর মন্তব্য, “পাম অ্যাভিনিউয়ে মাত্র ৫০ টাকা ভাড়ায় থাকেন বুদ্ধবাবু! আপনারা গেলে ১০ হাজার টাকাতেও পাবেন না হয়তো!”
বস্তুত, শাসক দলের দিক থেকে এমন আক্রমণ যে তাঁর দিকে আসবে, ঘনিষ্ঠ মহলে আগাম সেই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন সূর্যবাবু! তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি বসানোর কথা ফের যে সামনে আনা হতে পারে, জেলে পাঠানোর কথা বলা হতে পারে, এমনই ধরে রেখেছিলেন বিরোধী দলনেতা। পার্থবাবুরা সেই পথেই হেঁটেছেন জেনে সূর্যবাবুর মন্তব্য, “আমি জেলে যাওয়ার জন্য তৈরি! ওঁরা প্রমাণ করুন। এই সব কথা তো অনেক দিন ধরেই চলছে।”
পুরসভার টাকা নয়ছয় নিয়ে তাঁর অভিযোগের প্রমাণ দেওয়ার জন্য আবার সূর্যবাবুকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ। এফডিআইয়ের বিরোধিতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলছেন, লুঠ চলছে। আর তা ঢাকতে ঝুট বলা হচ্ছে! মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য ব্যবহার করেই সূর্যবাবু মঙ্গলবার বলেছিলেন, কলকাতা পুরসভায় লুঠ চলছে! কলকাতা ফিকি আয়োজিত আবাসন সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে এ দিন এক আলোচনা-সভার শেষে সূর্যবাবুর ওই মন্তব্য নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফিরহাদ বলেন, “পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়! এফডিআই আনার মাধ্যমে কেন্দ্র গরিবদের লুঠ করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে আমরা বলেছি। এফডিআইয়ের প্রস্তাব বাস্তব ঘটনা। কিন্তু সূর্যবাবু যে অভিযোগ করেছেন, তা ভিত্তিহীন। তাঁর অভিযোগের প্রমাণ দিন, আমরা ব্যবস্থা নেব।”
প্রসঙ্গত, এফডিআই-প্রসঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম মমতার সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে বলে এ দিনের সভায় পার্থবাবুর সঙ্গেই অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। নাম না-করে মুকুলবাবুর হুঁশিয়ারি, “পিছন থেকে সুতো টানবেন না! সামনে থেকে ময়দানে নেমে রাজনৈতিক লড়াই করুন।” জনবিরোধী নীতির ফলে লোকসভা ভোটে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মুকুলবাবু বলেন, “লোকসভা ভোট যে দিনই হোক, কংগ্রেস তিন সংখ্যায় (১০০) পৌঁছতে পারবে না, বলে দিচ্ছি।” এর পরে রান্নার গ্যাসের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে গৃহিনীদের নিয়ে মিছিল করার পরিকল্পনা করছে তৃণমূল। |