বাসস্ট্যান্ডে থিকথিকে ভিড়। বাস, ট্যাক্সি, ট্রেকারের হর্নের দাপট আর যাত্রীদের কোলাহলে এলাকা সরগরম। আর এমন পরিবেশেই বিষ্ণুপুর শহরের রসিকগঞ্জে তিলতিল করে একটা শান্ত গ্রাম তুলে আনছেন কয়েকজন শিল্পী। রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পিছনেই রসিকগঞ্জ দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপে এ বার উঠে আসছে আস্ত একটা গ্রাম।
খড়ের ছাউনির মাটির ঘর। ঢেঁকিশালে ধান কুটছেন বৃদ্ধা। উঠোনে ধানের মড়াই। কুয়ো থেকে জল তুলছেন মহিলারা। কী নেই? চই-চই করে খোঁয়াড়ে ফিরছে হাঁসের দল, গোয়ালে বাঁধা গরু, বাছুর। সবই মাটি দিয়ে তৈরি করছেন এক দল মৃৎশিল্পী। আর ক’টি দিন বাদেই পুজো। তাই এই মণ্ডপ ভাবনা ফুটিয়ে তোলার মূল দায়িত্ব যাঁর কাঁধে, সেই গৌর বায়েন এখন ঘোর ব্যস্ত। ওন্দায় তাঁর বাড়ি। তিনি জানান, মণ্ডপজুড়ে ১৬টি মূর্তি থাকবে। ওন্দায় ওই সব মূর্তি তৈরি করছেন মৃৎশিল্পীরা। আর রসিকগঞ্জের মণ্ডপ সজ্জার কাজ পরিচালনা করছেন তিনি। |
তাঁর কথায়, “আমরা গ্রামের ছেলে। মণ্ডপ ভাবনাটাও গ্রামীণ, চেনা জগৎ নিয়ে। তাই কাজ করতে আমাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।” বস্তুত তিনি গ্রামীণ পরিবেশ ভাবনা নিয়েই গত কয়েক বছর ধরে বাঁকুড়া জেলা তো বটেই, অন্য জেলার মণ্ডপ সাজানোর কাজ করে আসছেন। এ বছর রসিকগঞ্জ ছাড়াও চন্দ্রকোণাতেও তাঁর দল এই ভাবনার উপর মণ্ডপ করছেন। সারা বছর চাষবাস করা বছর চল্লিশের গৌরবাবুর বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরতে ঘুরতে মণ্ডপ সাজানোর পরিকল্পনা মাথায় আসে। সে প্রায় বছর পাঁচেক আগের কথা। তার পর দল তৈরি করে কাজে নেমে পড়েন। এখন বছরভর বিভিন্ন পুজোর মণ্ডপ সাজানোর কাজ করেন।
রসিকগঞ্জের মণ্ডপে এখন ১০ জন ঘরামির কাজ করছেন। চালার উপর বাঁশ বাঁধতে বাঁধতে সুধীর পাল, গড়ু বাগদি, হারাধন বাউরিরা বলেন, “আমাদের তো চাষের জমিই নেই। জনমজুরী করে সংসার চলে। দারিদ্র আমাদের নিত্য সঙ্গী। তবে কয়েক বছর ধরে পুজোর সময় মণ্ডপ সাজানোর কাজ পাচ্ছি। এই কাজে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে রোজগার হচ্ছে। চাষের কাজে তো এত রোজগার নেই।” পুজো এলেই তাই ওঁদের পরিবারে দুটো বাড়তি টাকা আসে। ছেলেমেয়েদের গায়েও নতুন জামা-কাপড় ওঠে।
থিমের পুজো তাই লক্ষ্মীর মুখ দেখিয়েছে ওঁদের। পুজো কমিটির পক্ষে থিমের দায়িত্বে রয়েছেন সুমন্ত দাস। তিনি বলেন, “এক মাস ধরে কাজ চলছে। মণ্ডপ-কর্মীদের দৈনিক ২০০ টাকা আর মূর্তি পিছু ৯০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। জানি না শেষ পর্যন্ত খরচ কোথায় পৌঁছবে।” |