বুথের পথে পা মাড়ালেন না সুতি-১ ব্লকের ৭টি গ্রামের ১৩টি বুথের ১৬ হাজার ভোটার। একই ভাবে ভোট বয়কট করলেন সাগরদিঘির ২টি, খড়গ্রামের ৪টি, রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গিপুর, লালগোলা ও সুতি-২ ব্লকের বুথ মিলিয়ে আরও ১৩টি বুথের প্রায় ১১ হাজার ভোটার। সর্বত্রই দাবি হয় বেহাল রাস্তা সংস্কারের কিংবা বিদ্যুতের। স্থানীয় ব্লক প্রশাসন অবশ্যই ভোট বয়কট এড়াতে উদ্যোগী হন। কিন্তু গ্রামবাসীরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। গ্রামবাসীরা অবশ্য ভোট বয়কটেই ক্ষান্ত হয়নি, গ্রামে আসা ভোট কর্মীদের খাবার পর্যন্ত সরবরাহ করতে রাজি হননি তারা। ফলে না খেয়েই কাটাতে হয়েছে তাদের। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “ওই বয়কটে দলের প্রার্থীর সে ভাবে কোনও ক্ষতি হবে না।” কিন্তু কংগ্রেসের জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা আশিস তেওয়ারির মতে, “অন্যান্য ব্লকে বিচ্ছিন্ন দু-একটি বুথে ভোট বয়কটে সে ভাবে ক্ষতি না হলেও সুতিতে বয়কটে সামিল ৭টি গ্রামের ভোটারদের বয়কট ক্ষতি করবে কংগ্রেসের।”
নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা হলেই বিভিন্ন দাবিতে ভোট বয়কট নতুন কিছু নয়। কিন্তু সে সব ভোট বয়কট হয়ে থাকে বিচ্ছিন্ন ভাবে। একই দাবিতে এক সঙ্গে ৭টি গ্রামের ১৩টি বুথের ১৬ হাজার মানুষের সম্মিলিত ভোট বয়কটের ঘটনা এবারে অবশ্য অতীতের সব নজিরকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সুতি-১ ব্লকের গোঠা, আরাজি রমাকান্তপুর, ফতেপুর, খড়িবোনা, কাঁঠালতলা, রমাকান্তপুর ও পাঁচগাছিয়ায় একই সঙ্গে যে ভাবে ভোট বয়কটে সামিল হয়েছে, তা রীতিমত অস্বস্তিতে ফেলেছে প্রশাসনকে। তাদের দাবি, চাঁদনিচক থেকে কাঁঠালতলা পর্যন্ত প্রায় ৬ কিমি দুটি বেহাল রাস্তার সংস্কার। গত সাত দিন ধরে বয়কটের সমর্থনে মিছিল, সভা, দেওয়াল লিখন গ্রামবাসীরা বাদ রাখেননি কিছুই। কোনও গ্রামেই রাজনৈতিক দলের নেতাকে ভোট প্রচারের জন্য ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সুুতি-১ ব্লকের বিডিও সুবীর দাস “ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য গ্রামবাসীদের বোঝানো হয়। কিন্তু তাঁরা অনড় থাকেন।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের মণিরুল ইসলাম বলেন, “মোরাম ফেলে দীর্ঘ দিন আগে ওই দুটো রাস্তা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দেখভালের অভাবে মোরাম উঠে গিয়েছে। সংস্কারের কথা বলা হলেও কোনও কাজ হয়নি। তাই ৪টি গ্রামের সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক জোটবদ্ধ হয়ে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়।” কংগ্রেসের আশিস তেওয়ারি বলেন, “ওই দুটি রাস্তার অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। তাই গ্রামবাসীদের ক্ষোভ স্বাভাবিক।” জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা খাতে ওই রাস্তা তৈরির জন্য ওয়ার্কঅর্ডারও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্ষা ও ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি।”
একই ভাবে খড়গ্রামের আতাই, গহিড়া, কলগ্রাম, বুথের যমুনি গ্রামের বাসিন্দারা ভোট দেননি রাস্তার দাবিতে। জঙ্গিপুরের জালালপুরের দুটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে দেননি সেখানকার মানুষ। প্রিসাইডিং অফিসর সাবরুল আমিন বলেন, “ভোট তো কেউ দেননি। সেই সঙ্গে খাবার না পেয়ে শুকনো চিড়ে, মুড়ি খেয়ে কাটাতে হয়েছে আমাদের।” |