অভিনয়ের মৃত্যু সত্যি হল মহড়ার মঞ্চে
ছেলের হারমোনিয়ামে বেজে চলেছে করুণ সুর। মহড়ার মঞ্চে বাবা অভিনয় করছেন বৃদ্ধ রাজার চরিত্রে। যাত্রাপালার শেষ দৃশ্য রাজপাট ও নাবালক দুই ছেলের ভার মন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে কথা বলতে বলতে মঞ্চের উপরে পড়ে যাচ্ছেন রাজা। তারপর ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন। সবকিছুই চলছিল নিখুঁতভাবে। যাত্রার পরিচালকও বেশ খুশি। দিনের শেষে গ্রামীণ যাত্রার মহড়া দেখতে আসা দর্শকরাও বুঁদ হয়ে রয়েছেন বৃদ্ধ রাজার অভিনয়ে। কিন্তু একি! পাট শেষ হয়ে গেলেও মহড়ার মঞ্চে এখনও ও ভাবে পড়ে আছেন কেন রাজার চরিত্রে অভিনয় করা প্রৌঢ়! সবাই ভাবছে, দৃশ্যটাকে আরও ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রৌঢ় হয়ত একটু বেশি সময় নিচ্ছেন। এ দিকে মৃত্যু-দৃশ্যে ছেলের হারমোনিয়ামে বেজেই চলেছে করুণ সুর। পরে যখন সবাই বুঝতে পারলেন যে, কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে, ততক্ষণে মারা গিয়েছেন ছাই দাস (৫৯) নামে ওই বৃদ্ধ।
অন্য দিনের মত সোমবার রাতে তেহট্টের কোমথানা গ্রামের সর্দারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জড়ো হয়েছিলেন অভিনেতারা। স্কুলেই একটি অস্থায়ী মঞ্চ করে চলছিল ‘কাজলরেখা’ যাত্রাপালার মহড়া। কোমথানা গ্রামের প্রৌঢ় ছাই দাস পেশায় দিনমজুর। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তার যাত্রার শখ। এই যাত্রাতে তিনি বৃদ্ধ রাজার চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। ছেলে গোপীনাথ দাস আবার এই যাত্রা পালার যন্ত্রশিল্পী। তিনি হারমোনিয়াম বাজান। সোমবার রাতের ওই ঘটনার পরে শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম।ছেলে গোপীনাথ বলেন,‘‘বাবা খুব যাত্রা পাগল মানুষ ছিলেন। এই বয়সেও মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করতেন। এই পালাতে তিনি বৃদ্ধ রাজার চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। শেষ দৃশ্যে বাবা ও ভাবে পড়ে থাকবেন এটাই তো কথা ছিল! এ দিন একটু বেশি সময় লাগলেও প্রথমে আমরা কেউ অবাক হয়নি। ভেবেছিলাম যে, দৃশ্যটাকে আরও প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করছেন। সেইমত আমিও হারমোনিয়াম বাজিয়ে গিয়েছি। পরে বাবাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, বেশ কিছুক্ষণ আগেই বাবা মারা গিয়েছেন।’’
ওই পালাতেই অভিনয় করছিলেন কোমথানার বাসিন্দা ও পলশুন্ডা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী ভরত ভৌমিক। ভরতবাবু বলেন,‘‘আমাদের গ্রামে লক্ষ্মীপুজো খুব ধুমধাম করেই হয়। সেই উপলক্ষ্যে প্রতিবছর আমরা যাত্রাপালার আয়োজন করি। নিজেরাই সেই পালাতে অভিনয় করি। এবারের এই পালাও লক্ষ্মীপুজোর সময় করার কথা ছিল। কিন্তু মহড়াতে এই ঘটনা ঘটার পর এখনই আমরা কিছু ভাবতে পারছি না। ছাইদা বহু পুরনো অভিনেতা। যাত্রা নিয়ে খুব পাগলামি ছিল ওঁর। তাঁর এর আকস্মিক মৃত্যুর পর আমরা সকলেই খুব ভেঙে পড়েছি।’’
বার্নিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান তরুণকুমার ঘোষচৌধুরী বলেন,‘‘যাত্রার মহড়ায় শেষ দৃশ্যে মৃত্যুর অভিনয় করতে করতে ছাই দাস মারা গিয়েছেন। অভিনয় চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.