ভোটের ডায়েরি

জঙ্গিপুর বিধানসভার ৬৪ নং বুথে ইভিএম বিকল ঘন্টাখানেক। ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকার পর নতুন ইভিএম এলে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। একই সঙ্গে লালগোলা বিধানসভার চারটি বুথেও ইভিএম খারাপ হয়ে যায়। পরে বিকল্প ইভিএম নিয়ে আসা হয়।
৩০ নং লালখান্দিয়ার ব্যারেজপাড়া প্রাথমিক স্কুলে গোলমাল বাধে। সিপিএমের অভিযোগ, কংগ্রেসের লোকজন অবাধে বুথে ঢুকছে। সিপিএম প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট সোমনাথ সিংহরায় বলেন, “ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।” যদিও ওই প্রিসাইডিং অফিসার এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
লালখান্দিয়ার ব্যারেজপাড়া প্রাথমিক স্কুলে আচমকা হাজির হন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার। বুথে অনুপ্রবেশের অভিযোগে হাতেনাতে সাইফুদ্দিন শেখ নামে এক কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করেন তিনি।
খোশমেজাজে ছিলেন দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং সিপিএমের মোজাফ্ফর হোসেন।
খরগ্রামের কলগ্রাম বুথের সামনে জড়ো হন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। বুথের সামনে ভিড় দেখে একজন পুলিশকর্মী এসে তাঁদের বুথ থেকে ২০০ মিটার দূরে দাঁড়াতে বলেন। গ্রামবাসীরা সমস্বরে জানান, “আমরা তো স্যার ভোটই দিচ্ছি না। আমরা তো ভোট দেওয়া থেকেই অনেক দূরে আছি। আবার কতদূরে যাব?’’ তবে কোনও বিতর্কে না জড়িয়ে গ্রামবাসীরা অবশ্য ওই পুলিশ কর্মীর কথা শুনে ২০০ মিটার দূরেই সরে দাঁড়ান।
রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করেন নতিবেরপাড়ার দুই বুথের ১৮২৫ জন ভোটার। তাঁদের কেউই এদিন বুথমুখো হননি। তবে ব্যতিক্রম শুধু সুকুমার সরকার। সকাল দশটা নাগাদ একমাত্র তিনিই ভোট দিতে এসেছিলেন। সুকুমার জানান, ‘‘সব কিছুতেই তো পিছিয়ে আছি, তাই ভোটটাই সবার আগে দিলাম। অন্তত এটাতে তো প্রথম হতে পেরেছি।”
লালগোলা মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে রীতিমত কংগ্রেস নেতাদের কেতাতে হাজির একদল ক্ষুদে। মাথায় কংগ্রেসের দলীয় টুপি ও কাঁধে উত্তরীয় ঝুলিয়ে ভোটকেন্দ্রে নজর কাড়ল তারা।
তবে সামান্য যেটুকু গণ্ডগোল হয়েছিল, তা পুলিশ সামল দিল শান্তিপূর্ণ ভাবেই।
বিজেপি যুব মোর্চার সম্পাদক সোমনাথ মাহান্তোর অভিযোগ, আহিরণের বাঙাবাড়ির কয়েকটি বুথে এক পুলিশ অফিসার পুরনো মামলা রয়েছে এই অভিযোগে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে ভোটদানে বাধা দিচ্ছে। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “আহিরন এলাকায় কিছুই ঘটেনি।”
লালগোলা থানার সহায়তা কেন্দ্রটি এদিন ছিল একেবারেই অন্য চেহারায়। ভোটের ডিউটিতে এসে জমিয়ে তাস খেলতে ব্যস্ত ছিলেন একদল পুলিশকর্মী। নির্বাচন সংক্রান্ত কোন গোলমাল হয়নি ঠিকই তবে জমে উঠেছিল টেক্কা, বিবি, গোলামের লড়াই।
বুথ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এই সরকারি ঘোষণার প্রতিবাদে জালালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবরোধ করেন জাগুনপাড়া গ্রামের শতাধিক মহিলা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে মহিলাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। আহত হন চারজন মহিলা। ঘন্টা দুয়েক পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও ভোট দিতে আসেননি কেউই।
ভোট হল নির্বিঘ্নেই। দীর্ঘ লাইন যেমন দেখা গিয়েছে ভোট দিতে, তেমনই দেখা মিলেছে শূন্য বুথের।
ভোট বয়কট করে রীতিমতো চড়ুইভাতি করে ফেললেন নতিবেরপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। ভোটকেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে উনান খুঁড়ে হইহই করে চালে-ডালে ফুটিয়ে গরম খিচুড়ি আর মুচমুচে আলুভাজা।
ঝেঁপে বৃষ্টি এল। বহু জায়গায় যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা লাইন ভেঙে উঠে গেলেন ঢাকা জায়গার সন্ধানে। তবে বুথে যাতে কেউ ঢুকে পড়তে না পারেন, সেই দিকে কড়া নজর ছিল পুলিশের।
সাগরদিঘিতে মোজাফ্ফর হোসেনকে দেখে মুড়ির বাটি এগিয়ে দিলেন দলেরই এক কর্মী। সিপিএম প্রার্থীর সারা দিন তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি। সময়ই পাননি। কেবল গলা দিয়ে নেমেছে কয়েক কাপ চা।
সাংবাদিকদের নিজের বাড়িতে ডেকে কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমি জিতবই।”
কোথাও গ্রামবাসীরাই খাইয়েছেন ভোটকর্মীদের।
দলীয় অফিসে বসে মোজাফ্ফর জানালেন, “জয় তো হবেই, তবে গিরিয়া এবং সেকেন্দ্রা নিয়ে আমি চিন্তায় রয়েছি। ওই এলাকার দশটা বুথে এজেন্ট দিতে পারিনি আমরা।”
বৃষ্টি ধরেছে। ফিরতে শুরু করলেন ভোটকর্মীরা।

ছবি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক, অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায় এবং বিশ্বজিৎ রাউত



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.