সকাল থেকেই মুখ ভার করে ছিল আকাশ। বেলা বাড়তেই শুরু হয় বৃষ্টি। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে সেই বৃষ্টি বিঘ্নিত উপ-নির্বাচনে বুধবার ভোট পড়ল ৬৭ শতাংশ।
দু-একটি বুথে ভোট বয়কট এবং বিক্ষিপ্ত কয়েকটি হাতাহাতির ঘটনা ছাড়া এ দিনের উপ-নির্বাচন প্রায় ঘটনাহীন। অধিকাংশ বুথে আধা সামরিক বাহিনী কিংবা জেলা পুলিশের টহলদারি থাকলেও কোথাওই তাদের তৎপর হয়ে ওঠার মতো পরিস্থিতি হয়নি।
নবগ্রামে, নকল ইভিএম নিয়ে ঘোরার জন্য ২ জনকে এবং রঘুনাথগঞ্জের লালখানদিয়াড়ে বুথের মধ্যে প্রচার চালানোর অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করা--‘গণ্ডগোলের’ ঘটনা বলতে সাকুল্যে এই দুটিই। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সন্ত্রাস নেই, গণ্ডগোল নেই, হাতাহাতি নেই, একেবারেই নির্বিঘ্ন ভোট বলতে পারেন।” |
তবে অভিযোগ রয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য যেমন বলেন, “রঘুনাথগঞ্জের গিরিয়া ও সেকেন্দ্রায় কংগ্রেস যথেচ্ছ সন্ত্রাস চালিয়েছে। রঘুনাথগঞ্জের ১০টি বুথে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি করেছি আমরা।” যথারীতি সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিধানসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা মহম্মদ সোহরাব। তিনি বলেন, “অবাধ, নিরপেক্ষ ভোট হয়েছে জঙ্গিপুরে। পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি অবান্তর।”
এর মধ্যেই সুতির বালিয়াঘাটিতে বুথের সামনে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে বচসার জেরে এক সিপিএম কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে কংগ্রেস সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অমল চৌধুরী বলেন, “আহত ওই সিপিএম কর্মীকে মহেশাইল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে।”
তবে কংগ্রেস ও সিপিএম পারস্পারিক দোষারোপ করলেও এ দিনের নির্বাচনে প্রায় অনুপস্থিত শাসক দল তৃণমূল। তাঁদের দলীয় নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল কার্যত দর্শকের।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি বলেন, “জঙ্গিপুরের নির্বাচনে তৃণমূল কর্মীদের ঠিক কী করণীয় তা নিয়ে কোনও দলীয় নির্দেশ ছিল না। তাই এ দিনের নির্বাচনে আমরা নীরব দর্শকই ছিলাম।”
তবে স্থানীয় নেতাদের কেউ জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করেছি’, কেউ বা বলেছেন, ভোট দিয়ে সারাটা দিন কেটেছে দলীয় কার্যালয়ে ‘আড্ডা’ মেরেই। কিন্তু ভোটটা দিলেন কাকে? জঙ্গিপুরের এক তাবড় তৃণমূল নেতার কথায়, “দলীয় নির্দেশ ছিল কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ছাড়া যাকে খুশি ভোট দেওয়ার। সেটাই করেছি।”
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জঙ্গিপুরের শেখ ফুরকান অবশ্য বলেন, “পরিস্থিতি বুঝে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দলীয় কর্মীদের। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া না দেওয়ার কোনও নির্দেশই ছিল না।” |