‘আগে নব্বই মিনিট দৌড়তাম, এখন দৌড়নোর কোনও হিসেব নেই’
কা হাতে সব সামলাচ্ছেন। কখনও ছুটছেন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিতে, কখনও আবার অ্যাসোসিয়েশনের কাজে প্রচন্ড ব্যস্ত। অবশেষে ভাইচুং ভুটিয়া-কে ধরা গেল তাঁর বাচ্চাদের নিয়ে ফুটবল খেলার ফাঁকেই। বুধবার বিকেলে গ্যাংটকের পালজোর স্টেডিয়ামের মাঠে দাঁড়িয়েই আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বেরিয়ে এল ইউনাইটেড সিকিমের প্রাণপুরুষের নানা রূপ।

প্রশ্ন: আপনি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন?
ভাইচুং: আমি বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা তো উচিত, কিন্তু করি না।

প্র: পুনর্জন্ম হলে কী হতে চান?
ভাইচুং: ফুটবলারই। যে খেলা এত যশ, নাম, ঐশ্বর্য দিয়েছে, তাকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারব না। ফুটবল আমার প্রাণ।

প্র: তখন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান কিংবা জেসিটি-র মধ্যে কাকে বাছবেন? নাকি বিদেশের কোনও ক্লাব?
ভাইচুং: যদি ইউনাইটেড সিকিম বলে কোনও ক্লাব সেই সময় থাকে তা হতে এখানেই খেলতে চাইব। না হলে অবশ্যই ইস্টবেঙ্গল। আমার জীবনের সেরা সময়টা আমি লাল-হলুদ জার্সিতেই কাটিয়েছি।
পালজোর স্টেডিয়ামে দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে ভাইচুং। ছবি: প্রীতম সাহা।
প্র: ফুটবলের বাইরেও তো নিজের এত বড় জগত বানিয়ে রেখেছেন। তা হলে পরের জন্মেও ফুটবলারই হতে চান কেন?
ভাইচুং: আমার নামের আগে থেকে ফুটবলার শব্দটা সরিয়ে নিলে ভাইচুং ভুটিয়াকে কেউ চিনবে না। ফুটবলের বাইরে যেটুকু নাম করেছি, সেটাও তো এই খেলাটার সৌজন্যেই।

প্র: ভারতীয় ফুটবলে ভাইচুং মানে কিংবদন্তি। ভাইচুংয়ের চোখে ভাইচুং কী?
ভাইচুং: স্বনির্ভরশীল। স্বাধীন। আমার বাবা-মা চাইতেন না আমি ফুটবল খেলি। জেদ করে খেলতে এসেছি। ওঁরা চাইতেন না আমি ইস্টবেঙ্গলে খেলি। কিন্তু আমি কোনও কথা শুনিনি। শুধু নিজের ইচ্ছে আর ফুটবলের প্রতি ভালবাসা আমাকে ফুটবলার তৈরি করেছে। একটা কথা আজ বলতে চাই। আমার বাবা-মার মতো আমি আমার ছেলেমেয়েদের কিন্তু আটকাব না। ওদের যা পছন্দ ওরা তাই করতে পারবে। পুরো স্বাধীনতা দেব।

প্র: আপনার দীর্ঘ আঠারো বছরের বর্ণময় ফুটবলজীবনের এক রকম অবসান ঘটেছে। সত্যিই কি আপনার আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর সময় হয়েছিল?
ভাইচুং: মানসিক ভাবে আমি অবসর নেওয়ার জন্য পুরোপুরি তৈরি ছিলাম। ফিটনেসের অভাব হচ্ছিল বলব না। তবে প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা সময় আসে যখন পরিবারকে গুরুত্ব দিতে হয়। আমি মনে করি, সেই সময়টা হয়েছিল। কিছু দায়বদ্ধতা পরিবারের জন্যও থাকে। আর ইউনাইটেড সিকিম তো আমার আর একটা সন্তান। ওকে বড় করতেও প্রচুর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে ফুটবল খেলতে থাকলে সেই সময়টা দিতে পারতাম না।

প্র: ফুটবলার ভাইচুংকে এ দেশের আর দরকার নেই বলছেন?
ভাইচুং: দরকার না পড়লেই খুশি হব। যদি কখনও ইন্ডিয়া টিমে আবার ডাক পড়ে, ভাবব ভারতীয় ফুটবল ঠিক পথে চলছে না।

প্র: ভারতীয় দলের অধিনায়ক থেকে ইউনাইটেড সিকিমের সর্বময় কর্তা। জীবনটা এক ধাক্কায় কতটা বদলে গিয়েছে?
ভাইচুং: একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। তখন মাঠের ভেতরে দৌড়তাম। এখন মাঠের বাইরে দৌড়চ্ছি। তবে পরিশ্রম তখনও করতে হত, এখনও হয়। পার্থক্য একটাই। মাঠের ভেতরে নব্বই মিনিট বাঁধা থাকত। মাঠের বাইরে সময়ের কোনও হিসেব নেই। ছুটছি, ছুটছি আর ছুটছি। কোথায় গিয়ে থামব জানি না।

প্র: নব্বইয়ের শুরু থেকে দু’হাজার দশের মাঝামাঝি। এত লম্বা ইনিংসে বহু বিদেশি ফুটবলারের সঙ্গে খেলেছেন। আপনার দেখা সেরা বিদেশি এ দেশের ফুটবলে কে?
ভাইচুং: ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র আর ব্যারেটো। ওদের সঙ্গে আমার দারুণ ‘কেমিস্ট্রি’ ছিল। আমরা একে ওপরকে এত ভাল বুঝতাম যে, মনেই হত না নিজেদের মধ্যে একটাও মিস পাস হবে।

প্র: বব হাউটন না উইম কোভারম্যান্স? কাকে এগিয়ে রাখবেন?
ভাইচুং: বব ভারতীয় ফুটবলকে যা দিয়েছে, তা কখনওই মুছে ফেলা যাবে না। ওর আমলেই আমরা এশিয়া কাপ খেলেছিলাম। এখনও পর্যন্ত সেটাই আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। কোভারম্যান্স নতুন স্ট্রাইলে খেলাচ্ছেন। সবে একটা টুর্নামেন্ট জিতেছে। এত তাড়াতাড়ি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।

প্র: আপনার উত্তরসূরিদের হাতে ভারতীয় ফুটবল কতটা নিরাপদ বলে মনে করেন?
ভাইচুং: সুনীলের তরুণ দলে প্রচুর প্রতিভা আছে। আমার বিশ্বাস ওরা ভারতীয় ফুটবলকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

প্র: ভাইচুংয়ের পরে ভারতীয় ফুটবলে কে?
ভাইচুং: সুনীল ছেত্রী।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.