গ্যাংটকে সেয়ানে সেয়ানে: আজ মর্গ্যান বনাম ডি’রাইডার, ইস্টবেঙ্গল বনাম সিকিম
পাহাড়ি বিছে মারতে লাল-হলুদের অস্ত্র পাহাড়ি জরিবুটি
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ছক কষছেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।
পাহাড়ি বিছের ‘অ্যান্টিডোট’ পাহাড়ি জরিবুটি!
করিম বেঞ্চারিফার সালগাওকরকে হারিয়ে আই লিগের শুরুতেই আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ইউনাইটেড সিকিম। কোন সিন্দুকে ভাইচুং ভুটিয়ার দলের বিস্ফোরণের ছক গোপন রাখা আছে, তা রহস্য। অনেক বিশ্লেষণ, অনেক মন্তব্য, অনেক তত্ত্বকথা। উত্তর নেই।
গ্যাংটকের ভুবন ভোলানো সৌন্দর্যের মাঝে বুধবার সাতসকালে সেই রহস্যভেদে লাল-হলুদ শিবিরে কী প্রবল আকুতি। কখনও ফুটবলার, কখনও কোচের বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রশ্ন, এ রকম একটা তারকাহীন টিমের সাফল্যের রহস্যটা কোথায়? ময়নাতদন্তে যা ধরা পড়ছে, তা একে একে তুলে ধরা যাক।

দমের বাড়তি সিলিন্ডার: সমতল বা সাগরের সঙ্গে পাহাড়ের প্রধান পার্থক্য হল দমেতে টান পড়া। খাড়াই রাস্তা-ঘাটে চলতে প্রচুর দম লাগে। ইউনাইটেড সিকিম দলে স্থানীয় ফুটবলারদের সংখ্যা কম হলেও, গ্যাংটকে একসঙ্গে বহু দিন ধরে অনুশীলন করার সৌজন্যে পাহাড়ের পরিবেশের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে নিয়েছেন ফুটবলাররা। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে ভাইচুংয়ের দলকে টপকাতে মর্গ্যানের প্রধান ভরসা নিজের দলের পাহাড়ি ফুটবলাররাই। নওবা, সঞ্জু আর লালরিন্দিকা।
ছোট মাঠ: ভারতের অন্যান্য স্টেডিয়ামের তুলনায় পালজোরের মাঠ বেশ ছোট। সে জন্য ফুটবলারদের খুব বেশি দূরত্বের মধ্যে না থাকার আশঙ্কা থাকছে। দু’দিকের উইংয়ে আক্রমণ ছড়ানো কঠিন। বদলে নিজেদের মধ্যে প্রচুর ছোট-ছোট পাস খেলতে হবে। গোলের জন্য ‘রিটার্ন’ বলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। কেননা চিডি বা বলজিতের পায়ে বল পড়লেই ছোট মাঠে বিপক্ষের পায়ের জঙ্গল ছেঁকে ধরবে। গোলের মুখ খুলতে গেলে ব্যাকপাস কিংবা ‘রিটার্ন’ বল ভরসা। যা থেকে পিছন থেকে উঠে আসা ফুটবলার দ্বিতীয় বার শট বা হেড করতে পারেন। যা দাঁড়াচ্ছে, বৃহস্পতিবারের ম্যাচে কিন্তু মেহতাবদের মাঝমাঠের ওপর বেশি চাপ থাকবে।

ঢালু মাঠ: সদ্য ভূমিকম্পের জেরে মাঠের বাঁ দিকটা একটু হেলে গিয়েছে। সেই দিকটায় বল বিদ্যুৎ-গতিতে ছুটছে। প্রতিবর্তী ক্রিয়ার সময় ভীষণ অল্প। পেন-মেহতাবদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

ফুটবলারদের ক্লান্তি: বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে পালজোর স্টেডিয়াম আসতেই কালঘাম ছুটে গিয়েছে চিডিদের। প্রায় সাত ঘণ্টার পথ। পাহাড় মানেই এঁকে-বেঁকে সাপের মতো রাস্তা। সঙ্গে ফেডারেশনের ভুলে রংপো চেক পোস্টে নাইজিরিয়ানদের হয়রানি। বুধবার সকালে অনুশীলনের পরে বিকেলে মেহতাব-সঞ্জুরা স্থানীয় মার্কেটে শপিং করতে বেরোলেও, হোটেলের ঘরের বাইরে পা রাখেননি পেন-চিডি-ওপারা। বিরক্ত। ক্লান্ত। স্বয়ং মর্গ্যান বলছিলেন,“ম্যাচে ইউনাইটেড সিকিম আমাদের শত্রু নয়। আমাদের শত্রু হল এই লম্বা যাত্রা। অর্ধেক রক্ত তো এখানেই শুষে নিল। খেলব কী আর!”
ইস্টবেঙ্গল কোচ আরও একটা বিষয় নিয়ে বেশ বিরক্ত। আই লিগে স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের পরে কেন লাল-হলুদকে ফের একটা অ্যাওয়ে ম্যাচ দেশের আর এক সীমান্তে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মর্গ্যান। তাঁর যুক্তি, “মোহনবাগান লাজংয়ের সঙ্গে খেলেই হোম ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে কলকাতায়। তা হলে আমরা কেন পেলাম না? দু’সপ্তাহ আগেও জানতাম গ্যাংটকের ম্যাচটা শনিবার। হঠাৎ সোমবার রাতে জানতে পারি, ম্যাচটা বৃহস্পতিবার খেলতে হবে। কলকাতায় ফিরে চব্বিশ ঘণ্টাও বিশ্রামের সময় পেলাম না। তার ওপর এত ভয়ানক ধকল। এ ভাবে হয় নাকি?”

পাহাড়ি সমর্থকদের ভিড়: ইস্টবেঙ্গল বনাম ভাইচুংয়ের ক্লাবের ম্যাচ দেখার জন্য স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহ দেখার মতো। বুধবার সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওপারা-পেনদের অনুশীলন দেখতে যাঁরা ছুটে এসেছিলেন, তাঁদের ভিড়েই পালজোর স্টেডিয়ামের অর্ধেক গ্যালারি ভরে গিয়েছিল। তা হলে ম্যাচ দেখতে কাল কত লোক উপচে পড়তে পারেন, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, সব টিকিট নিঃশেষিত। কুড়ি হাজারের স্টেডিয়াম পুরো ভরে উঠবে। এতেও কোনও সন্দেহ নেই যে, ম্যাচে লাল-হলুদ সমর্থকদের তুলনায় ভাইচুং-সমর্থকই বেশি থাকবে। সুতরাং আগেভাগেই মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে হবে মেহতাবদের।

পাহাড়ের কোলে মর্গ্যানের ‘জয় হো’ মন্ত্রের পাঁচ রহস্য এগুলোই।
ফিলিপ ডি’রাইডার স্বভাবতই সালগাওকর আর ইস্টবেঙ্গলকে সমান সারিতে রাখছেন না। ফেড কাপ চ্যাম্পিয়নদের অবশ্যই উঁচু আসন দিচ্ছেন। তবু প্রবলতম আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ল সিকিম ইউনাইটেড কোচের গলা থেকে, “তারকাপ্রথায় আমি বিশ্বাস করি না। আমার শক্তি টিমগেম।” ঘরের মাঠে প্রবল সমর্থন থাকলেও, গত ম্যাচের দুই নায়ক রাজু দেবনাথ ও কোস্টা রিকার বিশ্বকাপার মাইকেল রডরিগেজকে চোটের জন্য পাবেন না রাইডার।
মাঠ, পরিবেশ-পরিস্থিতি কিংবা ক্লান্তি বাধার তালিকায় প্রচুর নাম। কিন্তু গোয়া থেকে গ্যাংটক পেন-চিডিরা ব্যাগে পুরে যেটা নিয়ে এসেছেন, সেটা হল ‘দেখে নেব’-র জেদ। হয়তো সে কারণেই ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক সঞ্জু প্রধান বললেন, “কোনও কিছুকেই ভয় পাচ্ছি না। লক্ষ্য তিন পয়েন্ট। কলকাতায় সেটা নিয়েই ফিরব।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.