ভারতীয় টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনের জেরে অভিযুক্ত ছ’জন আম্পায়ারকে সাময়িক নির্বাসনে পাঠাল আইসিসি। আইসিসি-র তরফে এ দিন সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হল, তাদের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ছ’জনকে কোনও স্তরের ম্যাচের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।
সোমবার রাতে স্টিং অপারেশন করে ধরা পড়ে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার ছয় আম্পায়ার ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে জড়িত। যার জেরে মঙ্গলবার আইসিসি জানিয়ে দেয়, চ্যানেলের কাছ থেকে যাবতীয় প্রমাণ নিয়ে তারা নিজস্ব তদন্ত শুরু করবে। সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোকেও যে যার দেশের অভিযুক্ত আম্পায়ারদের নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের চিফ এক্সিকিউটিভ অজিত জয়শেখরা এ দিন বলেছেন, “স্টিং অপারেশনের টেপ পরীক্ষা করে দেখছি। আমাদের স্থানীয় দুর্নীতি দমন বিভাগও কাজ করছে আমাদের সঙ্গে।” শ্রীলঙ্কার তিন আম্পায়ার গোপন ক্যামেরায় টাকা নিয়ে ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও আগে থেকে বিভিন্ন তথ্য ফাঁস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই তিনজন, গামিনি দিশানায়েকে, মরিস উইনস্টন ও সাগরা গালাজ। এঁরা তিনজনই অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তিন আম্পায়ারও বলেছেন, তাঁদের ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত করা হয়েছে। তবে যে ভারতীয় টিভি চ্যানেলে এই স্টিং অপারেশ করেছে, সেই চ্যানেল কর্তৃপক্ষও পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। কেউ যদি তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে চায়, তা হলে স্বচ্ছন্দে নিতে পারে। তার মোকাবিলার জন্য তারাও তৈরি।
পাকিস্তানের অভিযুক্ত আম্পায়ার নাদিম ঘাউরি চ্যানেল কর্তপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথাই ভাবছেন। পাক ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে পরোক্ষ সমর্থনও পেয়েছেন ঘাউরি। পাক বোর্ড আম্পায়ারদের নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত জানানোর ব্যাপারে অযথা তাড়াহুড়ো করতে চায় না। এ দিন ঘাউরি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য ভিডিও বিকৃত করা হয়েছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “যে ছদ্মবেশী রিপোর্টার আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিল, সে বলেছিল আমাকে তারা এক রিয়্যালিটি শোয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, যে ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির নাম বলেছিল ওই লোকটা, সেই সংস্থার অস্তিত্ব নেই। এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য ক রেন ভারতীয় আম্পায়ার অনিল চৌধুরী।” পাক বোর্ডের তরফে বলা হচ্ছে, “বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর, তাই এই ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেব না। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। আইসিসি-র সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
২০১০ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে পাকিস্তানের সলমন বাট, মহম্মদ আসিফ ও মহম্মদ আমেরকে স্পট ফিক্সিং করার অপরাধে জেল হয়। ২০০০ সালে গড়াপেটা করার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হান্সি ক্রোনিয়ের চির নির্বাসনের চেয়েও বড় ঘটনা এটি। আরও এক পাক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়াকেও কাউন্টি ক্রিকেটে পড়াপেটা করার জন্য চির নির্বাসনে পাঠায় ইংল্যান্ড বোর্ড।
এত দিন ক্রিকেটারদের গড়াপেটা করার কথাই উঠে এসেছে। এ বার সামনে চলে এল তাঁদের অন্ধকার দিক, ক্রিকেট মাঠে ন্যায়বিচার করাই যাঁদের কাজ। ক্রিকেটের সম্মান রক্ষার কাজ করে থাকেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধেই এ বার ক্রিকেটের সম্মানের আততায়ী হওয়ার অভিযোগ উঠছে। |