ফের পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট হাওড়ায়। জলের চাপ এতটাই কম যে, গত এক মাসে বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল পড়ছে সুতোর মতো। কোথাও জল আসছেই না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে জলসঙ্কটের কারণ খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি রাজ্যের কৃষি-বিপণন মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায় নিজেই যান পদ্মপুকুর জল প্রকল্পে। তাঁর অভিযোগ, “এই সঙ্কটের পিছনে আছে পুরসভার এক শ্রেণির অফিসার ও ঠিকাকর্মীর অন্তর্ঘাত। পুরসভা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এ বছর মে-জুন মাসে আচমকা হাওড়ার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে শহর জুড়ে। পরিস্থিতি সামালাতে পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পে ছুটতে হয় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপবাবুকেও। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকের ক’দিনের মধ্যেই জল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে জল সরবরাহ হয় ভোর ৫টা, বেলা ১২টা ও সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু মাস তিনেক যেতে না যেতেই সেপ্টেম্বর থেকে জলের চাপ কমতে শুরু করে। কিছু জায়গায় ১২টার জল বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যা বেশি হয় মধ্য হাওড়া ও উত্তর হাওড়ার একাংশে।
জলসঙ্কটে ভুক্তভোগী মধ্য হাওড়ার বাসিন্দা খোদ কৃষি বিপণন মন্ত্রী নিজেই সম্প্রতি হাজির হন বাম পরিচালিত হাওড়া পুরসভার ওই জলপ্রকল্পে। আসেন পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবপ্রসাদ দত্ত-সহ অন্য আধিকারিকেরাও। অরূপবাবু ঠিকা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জলসঙ্কটের কারণ নিয়েও খোঁজ নেন। পরে মন্ত্রী জানান, প্রকল্পের ঠিকাদারেরা দীর্ঘ দিন শ্রমিদের নিয়মিত বেতন দিচ্ছেন না। ফলে তাঁরা ক্ষুব্ধ। মন্ত্রী বলেন, “আমি জেনেছি এই ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে পুরসভার কিছু ইঞ্জিনিয়ার অন্তর্ঘাত করছেন। তাঁদের নির্দেশেই গঙ্গা থেকে জল তোলার জন্য ৪টি পাম্প চালানোর কথা থাকলেও গত এক মাস ঠিকা শ্রমিকেরা দু’টি মাত্র পাম্প চালাচ্ছেন। ফলে ঘাটতি হচ্ছে জলের। আমি এ ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
মেয়র পারিষদ (জল) সমীর সাহা বলেন, “মন্ত্রী কী অভিযোগ করেছেন, জানি না। খোঁজ নেব। কিছু জায়গায় জলের সমস্যা আছে। স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। পুজোর আগেই সমস্যা মিটবে বলে কথা দেওয়া যাচ্ছে না।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, এ কথা ঠিক যে জলসঙ্কট এ বার কৃত্রিম। পাম্প চালিয়ে গঙ্গা থেকে ঠিক মতো জল না তোলা ও বিভিন্ন ভাল্ভ ঠিক মতো না খোলায় এমন হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবপ্রসাদবাবুর অবশ্য দাবি, “আশা করছি পুজোর আগেই সমস্যা মিটবে। গঙ্গার জল তুলতে বেশি করে পাম্প চালাতে নির্দেশ দিয়েছি।” |