মায়ের বরাভয়ই ভরসা অসমের
রেললাইনের এপার আর ওপার। এপারে যখন প্রাচীন মন্দির নবকলেবরে উঠিয়ে আনছেন কারিগররা, ওপারে তখন নতুন করে গড়া হচ্ছে ‘পুরানা হাভেলি’। পুজো দেখতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল চত্বরে আসতেই হবে। এখানেই তো গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে রয়েছে মেগা পুজো— রেস্টক্যাম্প কালীবাড়ি, নামবাড়ি সার্বজনীন, পাণ্ডু আমেরিকান কলোনি। আর হীরক জয়ন্তী বর্ষে তাদের সঙ্গে সমানতালে টক্কর দিতে চলেছে রেল কলোনির পুজোও। আর গুয়াহাটির এ বারের পুজোয় প্রাধান্য প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার শিল্পীদের। মণ্ডপ থেকে আলো, এই কামাখ্যা ভূমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদেরই প্রভাব।
গুয়াহাটির পুজোর সবচেয়ে ভিড়ে ঠাসা পুজোর নাম জানতে চাইলে, ৯৯ জনই রেস্টক্যাম্পের নাম বলবেন। মেলা, খাবার পসরা, সাংস্কৃতিক মঞ্চ, কালী বাড়ি আর বিরাট প্যান্ডেল— সব মিলিয়ে পুজোর রেস্টক্যাম্প একেবারে হট্টমেলার দেশ। বাজেটও ১৮ লক্ষ। এই বছর তাদের থিমে একই সঙ্গে তিনটি মন্দিরের মেলবন্ধন ঘটতে চলেছে। কমিটির উপ-সভাপতি চন্দন দাশগুপ্ত জানান, ২০০৭ সাল থেকে গুয়াহাটির সেরা পুজো রেস্টক্যাম্প। সেই শিরোপা ধরে রাখতে এই বছর রেস্টক্যাম্পের তুরুপের তাস বাঁশ ও পাটকাঠির মণ্ডপ। বাইরে থাকছে তিনটি মন্দিরের মিশ্র প্রভাব। ভিতরে খোদাই, দেবদেবী ও গ্রামজীবনের কোলাজ। তাতে ব্যবহার করা হচ্ছে থার্মোকল ও কাঠের গুঁড়ো। ১৪ ফুট উঁচু প্রতিমা গড়ছেন কলকাতার শিল্পী অমরনাথ পাল। মণ্ডপের দায়িত্ব নিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের ভাষ্কর হালদার। আলোর খেলাতেও মাত করে রেস্টক্যাম্পই। এ বার তাদের আলোকশিল্পীরা আসছেন উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থেকে। ভিড় সামলাতে বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী ও সিসি ক্যামেরার নজরদারিও থাকছে।
ক’দিনই বা বাকি! গুয়াহাটির পাণ্ডুতে শিল্পীর ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। ছবি: উজ্জ্বল দেব
রেস্ট ক্যাম্পের অদূরেই পাণ্ডুর আমেরিকান কলোনি। সেখানেও সেই ডায়মন্ড হারবারেরই শিল্পী, অমিয় হালদার বাঁশ, প্লাইউড দিয়ে বানাচ্ছেন পুরনো রাজমহল। আধো আলোছায়াতে ভেঙে পড়া মহলের ভিতরে থাকছে অমরনাথ পালের সম্পূর্ণ মাটির প্রতিমা। তাঁর মুখে ফুটবে অজন্তার আদল। দেওয়ালে ঝুলবে আভিজাত্যের প্রতীক তৈলচিত্র। যুগ্ম সম্পাদক দেবব্রত দে জানান, নবমীতে মহা চণ্ডীযজ্ঞ আর চারদিন নানা অনুষ্ঠান তো থাকছেই।
অন্য দিকে, রেল কলোনির পুজোয় এ বার কোচবিহারের শিল্পীদের হাতে হাতে গড়ে উঠছে কোচবিহারের মদনমোদন মন্দির। ১৮৮৫ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ এই মন্দিরের নির্মাণ করান। প্রাচীন এই মন্দিরটির দু’পাশের দুটি দরজা ও থাম বাদ দিয়ে বাকিটা কাঠ, বাঁশ, কাপড় দিয়ে অবিকল গড়ছেন কোচ শিল্পীরা। পুজোর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা শিবাজী দাসের কথায়, রেল কলোনির গোলপার্কে মদনমোহন মন্দির ঘিরে পুজোর কয়েকদিন ঘাঁটি গাড়তে চলেছে ‘মিনি ভারত।’ তাঁর কথায়, রেলকে ঘিরে ভারতের নানা অঞ্চলের, নানা ভাষাভাষী মানুষ এখানে এক সঙ্গে থাকি। পুজোও করি হাতে হাত মিলিয়ে। কাউকে টেক্কা দেওয়া নয়, ভক্তি আর আনন্দের ধারা বজায় রেখেই টানা ৬০ বছর ধরে চলছে এই পুজো।” প্রতিমা গড়ছেন স্থানীয় শিল্পী মাখন পাল। চার দিনই চলবে খাওয়া দাওয়া। এখানকার আলোকসজ্জার ভার উত্তর ২৪ পরগনারই শ্যামনগরের শিল্পীদের হাতে।
গোলপার্ক থেকে আর একটু এগোলেই, থিম পুজোর অপর দিশারী— নামবাড়ি সার্বজনীন। ৫৩ বছরে পা দেওয়া নামবাড়ির পুজোয় এ বার মায়ের হাতে ত্রিশূল ছাড়া আর কোনও অস্ত্র থাকছে না। দশভুজার আর সব হাতেই বরাভয় মুদ্রা।
সম্পাদক শঙ্কর সরকারের বক্তব্য, সাম্প্রতিক সংঘর্ষের আবহে শান্তির বাণী ছড়াতেই এমন মাতৃমূর্তির ভাবনা। সেই সঙ্গে, মণ্ডপ ঘিরে থাকছে ৬০টি মডেল। মডেলের মাধ্যমেই বন্ধের বিরুদ্ধে, প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে নামবাড়ি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.