|
|
|
|
শিক্ষা আইনের সময়সীমা বাড়ানোর চিন্তা কেন্দ্রের |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর করার সময়সীমা তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করার কথা ভাবছে কেন্দ্র।
২০১০ সালের ১ এপ্রিল এই আইন বলবৎ হয়। তিন বছরের মধ্যে দেশের সমস্ত শিশুর জন্য অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল আইনে। কিন্তু আড়াই বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে বহু স্কুলই উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি। উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা যায়নি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভর্তি হয়নি পড়ুয়ারাও। সেই কারণে নির্ধারিত সময়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজনে সংসদে সংশোধনী আনা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। শেষ পর্যন্ত যদি এই সিদ্ধান্তই হয়, সেটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে বলে মনে করছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কারণ পশ্চিমবঙ্গ এই সময়সীমা বাড়ানোরই দাবি করে আসছিল। শিক্ষার অধিকার আইন সফল ভাবে রূপায়িত হচ্ছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। আইনে বলা আছে, রাজ্যের স্কুলগুলি যদি আইন না মানে, তাহলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে রাজ্যকেই। সে ক্ষেত্রে অনুদান আটকে দিতে পারবে কেন্দ্র।
শিক্ষার অধিকার আইন রূপায়ণ করার জন্য প্রতিটি স্কুলের পরিকাঠামোগত (ছাত্র অনুপাতে ক্লাসের সংখ্যা, শৌচাগার, খেলার মাঠ ইত্যাদি) লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য ছিল, তিন বছরের মধ্যে দেশের সমস্ত স্কুলে ওই নির্দিষ্ট মানের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু দেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ স্কুল এখনও ওই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি। প্রতিটি বুনিয়াদি স্কুলে প্রতি ত্রিশ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক এবং উচ্চ-বুনিয়াদি স্কুলে প্রতি পঁয়ত্রিশ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছিল। কেন্দ্রের হিসেবেই, ২০১০ সালে গোটা দেশে প্রায় ১২ লক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আড়াই বছর পরও গোটা দেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। নিয়োগ হওয়া শিক্ষকদের মধ্যেও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইন মেনে শিক্ষকদের যে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার, অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের তা নেই বলে ধরা পড়েছে মন্ত্রকের চোখে।
আগামী বছরের ৩১ মার্চ তিন বছরের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। তার ছ’মাস আগে এই পরিস্থিতি দেখে নড়েচড়ে বসেছে কপিল সিব্বলের মন্ত্রক। বহু রাজ্যও এক বছর ধরে ওই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য দাবি করে আসছিল। তার মধ্যে প্রথম সারিতেই ছিল পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যেরই দাবি ছিল, স্কুলগুলিতে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে যে অর্থ প্রয়োজন, তা তাদের কাছে নেই। কেন্দ্র যা অনুদান দেয়, তা-ও যথেষ্ট নয়। এখন আইন না-মানার দায়ে যদি সেই অনুদানও বন্ধ হয়ে যায়, তাতে সমস্যা বাড়বে।
সব দিক বিচার করে তাই মন্ত্রক আইন রূপায়ণের প্রাথমিক সময়সীমা আরও দু’বছর বৃদ্ধি করার কথা চিন্তা করেছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “পরিষদ যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সংসদে একটি সংশোধনী এনে ওই সময়সীমা বাড়ানো হবে।” রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ প্রসঙ্গে বলেন, “শিক্ষার অধিকার আইনকে যথাযথ ভাবে রূপায়ণ করার জন্য যদি কেন্দ্র সময়সীমা বৃদ্ধি করে, তা হলে তা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে। এতে রাজ্যগুলি ওই আইন রূপায়ণে আরও সময় পাবে।” |
|
|
|
|
|