|
|
|
|
নিরাশায় চাপা পড়েছে সংস্কার, খেদ প্রধানমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দুর্নীতির প্রশ্ন থেকে মাত্র ক’দিনের জন্য বিতর্কের মুখ ঘুরেছিল সংস্কারের দিকে। কিন্তু ফের যে কে সেই! এমন একটা পরিস্থিতিতে আজ কিছুটা আক্ষেপের সুরই ধরা পড়ল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বক্তব্যে। সিবিআইয়ের বার্ষিক অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, “দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে যে নিরাশার বাতাবরণ ও নেতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলা হচ্ছে, তাতে কোনও ভালই হচ্ছে না। বরং তা দেশের ভাবমূর্তি মলিন করছে। মনোবল ভেঙে দিচ্ছে প্রশাসনের।”
সন্দেহ নেই দুর্নীতি নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও প্রশান্তভূষণরা সম্প্রতি যে রকম হইচই ফেলে দিয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য। কংগ্রেস তথা মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ নেতার কথায়, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ মূলত দু’ধরনের।
এক, দুর্নীতির প্রসঙ্গে যে ভাবে এলোপাথাড়ি ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বাতাস ভারী করা হচ্ছে, তা দেশে দেশি ও বিদেশি লগ্নির প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করছে। বিশেষ করে দুর্নীতি নিয়ে রাজনৈতিক অভিযোগ, সিএজি-র মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের তরফে সরকারের নীতি নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং সর্বোপরি আদালতের অতিসক্রিয়তার কারণে এমন একটা আবহ তৈরি হয়েছে যা লগ্নিকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করার পক্ষে যথেষ্ট। অথচ মন্দার বাতাবরণেও বিনিয়োগ টানতে চেষ্টার কসুর করছেন না প্রধানমন্ত্রী।
মনমোহনের দ্বিতীয় উদ্বেগ হল, প্রশাসনে তৈরি হওয়া ভীতির পরিবেশ নিয়ে। কেননা, যে ভাবে নীতি নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমলাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাতে কেউই সাহস করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না, এড়িয়ে যাচ্ছেন। পাছে ভবিষ্যতে কোনও বিপদে পড়তে হয়। ফলে সরকারি ঘোষণাই শুধু সার হচ্ছে, কাজের কাজ হচ্ছে না তেমন।
এই নেতিবাচক বাতাবরণ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমনে সরকারের সদিচ্ছার কথাও ফের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, দুর্নীতি দমন আইন আরও কঠোর করতে সংশোধনী বিল আনতে চলেছে সরকার। তাতে ঘুষের লেনদেন ও তার বোঝাপড়ায় জড়িত কেউ যাতে পার না পায় সে দিকটি জোর পাবে। কর্পোরেট সংস্থাগুলির দায়বদ্ধতা বাড়ানোও হবে এই বিলের আর এক প্রধান লক্ষ্য। যাতে আর্থিক অনিয়ম হলে নির্দিষ্ট সংস্থাকে দায়ী করা যায়। তৃতীয় যে বিষয়টি বিলে গুরুত্ব পাবে তা হল, সৎ সরকারি কর্মচারীদের যেন কোনও হেনস্থার মুখে পড়তে না হয়।
তবে রাজনীতির কারবারিদের মতে, মনমোহন যা-ই বলুন না কেন, দুর্নীতি নিয়ে এই চাপানউতোর ও নেতিবাচক পরিবেশ সহজে দূর হওয়ার নয়। কারণ, সরকার ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে ভাবে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, তাতে ক্রমাগত অক্সিজেন পাচ্ছে বিরোধীরা। আগামী লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে পর্যুদস্ত করার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগগুলিই এখন সব চেয়ে বড় অস্ত্র বিরোধীদের।
আর সে কারণেই সিএজি হোক বা কেজরিওয়াল, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে যে কোনও অভিযোগ নিয়েই শোরগোল ফেলে দেওয়ার চেষ্টায় কোনও কসুর রাখছে না বিজেপি। আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পরক্ষণেই তাঁকে আক্রমণ করে দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “সিবিআইয়ের সম্মেলনে গিয়ে লোক দেখানো ভাল-ভাল কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ তলে-তলে এই সিবিআইকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করা হচ্ছে। বিজেপি নেতা মুরলীমনোহর জোশীর কথায়, “নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্য ইউপিএ সরকারই দায়ী। সরকার দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেওয়াতেই এই অবক্ষয়। এর সামগ্রিক দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।” |
|
|
|
|
|