পুজোয় থিমের ‘টক্কর’ চলবে কলকাতার পাড়ায়-পাড়ায়।
উৎসবের মোড়কে কোনও মণ্ডপে সচেতনতার বার্তা। বাদ নেই শিল্পের কারিকুরি, ভিন্প্রদেশের ট্যুরিস্ট-স্পটও। কেউ-কেউ আবার সাবেক পুজোতেই খুঁজবে থিমের আমেজ।
দুর্গাপুজোয় শান্তির বাণী পৌঁছে দেবে নাকতলা সম্মিলনী। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে নোবেল শান্তি-পুরস্কার প্রাপকদের কথা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্থাপত্যে সাজবে মণ্ডপের অন্দরমহল। বৈষ্ণবঘাটা বালক সমিতিতে আবার জাতীয় সংহতির কাহিনি। মণ্ডপ তৈরি হবে কালিম্পং-এ দলাই লামা প্রতিষ্ঠিত দুরপিনদাঁরা গুম্ফার আদলে। ‘আবার আরণ্যক’। পরিবেশ বাঁচানোর এমনই সংকল্প পূর্ব রাজপুর (বাস্তুতলা) অধিবাসীবৃন্দের মণ্ডপে। গাছগাছালি, জীবজগতের অনেক কিছুই অবলুপ্ত হচ্ছে বাঁকুড়া, ত্রিপুরা, বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষের হাতে তৈরি উপকরণে সে কথাই জানাবেন তাঁরা। মণ্ডপে আলো দেবে ‘সূর্যবাতি’ (সোলার-লাইট)। বাইপাসের কাছে কালীতলা স্পোর্টিং ক্লাবেও উষ্ণায়নের ভয়াবহতার ছবি। অনাবৃষ্টিতে মানবসভ্যতার বিপদ কতটা, ওই মণ্ডপে মিলবে তার উত্তর। থাকবে প্রকৃতিকে বাঁচানোর আর্তিও। গঙ্গা দূষণ রুখতে চায় কেন্দুয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। মণ্ডপে শিবের জটা থেকে গঙ্গোত্রী হয়ে পাহাড় পেরিয়ে মাটিতে নামবে নদীর ধারা। বর্জ্য থেকে মৃত পশুর স্তূপ কী ভাবে গঙ্গাকে গ্রাস করছে তাই দেখবেন দর্শকরা।
থিমের দৌড় থেকে দূরে থেকেই পুজো-কার্নিভালে মাতবে বেহালার সেনহাটি দুর্গোৎসব সমিতি। সবুজ মাঠে রঙিন টালি, বেড়ায় সাজানো আটচালা মণ্ডপ ঘিরে পঞ্চমী থেকে পাঁচ দিন মানুষের আনন্দমেলা। সাহাপুর মিতালি সঙ্ঘের মণ্ডপে সাতটি মহাদেশের মেলবন্ধন। হাতে-হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে সাতটি পুতুল। মানুষ-মানুষে বন্ধুত্ব, হৃদ্যতার প্রতীক তারা। তিনতলা সমান উঁচু মূল মণ্ডপে থাকবে পুতুল আদলেরই প্রতিমা।
সাতরঙের ১৫ লক্ষ কাচের চুড়িতে দেবীর অকাল বোধনের গল্প জানাবে পুঁটিয়ারি সর্বজনীন দুর্গোৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশে শুভশক্তিকে জাগাতে নিজের চোখ উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন রামচন্দ্র। তাঁকে নিরস্ত্র করেন দেবী দুর্গা। মণ্ডপের নকশায় থাকবে সেই ত্যাগের কথাও। ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’এমনই বিশ্বাস ম্যুর অ্যাভিনিউ পূজা কমিটির উদ্যোক্তাদের। নতুনের ভিড়ে যেন কোনও ভাবেই পুরনো হারিয়ে না-যায়, এ বারের পুজোয় সেই বার্তাই থাকবে মণ্ডপে।
দুগ্গা-দুগ্গা। বাঙালির এই অভয়মন্ত্রই থিম সন্তোষপুরের অ্যাভিনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল সমিতিতে। ঝড়-ঝঞ্ঝা-বিপদ-সঙ্কট সব থেকেই মুক্তি সর্বমঙ্গলার ওই নামে। লোহার পাত, ঘড়ি, ধুঁধুলের জালে সাজানো মণ্ডপের আনাচে কানাচে থাকবে সেই বার্তারই অনুরণন।মণ্ডপে-মণ্ডপে আনকোরা থিমের ভিড়। শুধু পুজো শুরুর অপেক্ষা। দুগ্গা-দুগ্গা বলে তখনই থিম-জোয়ারে ভাসবেন শহরবাসী। |