শ্লীলতাহানির অভিযোগে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের পুত্র সপ্তর্ষি দেবের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন বিধাননগর সরকারি কলেজের এক ছাত্রী। বিধাননগর উত্তর থানায় বুধবার বিকালে যিনি এই অভিযোগ দায়ের করেছেন, তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কলেজ ইউনিটের সম্পাদক।
অভিযোগ অনুসারে, এ দিন দুপুরে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী এ দিন দুপুর ৩টে ৪০ মিনিট নাগাদ বিদ্যাসাগর আবাসনের উল্টো দিকের রাস্তা ধরে কলেজে যাচ্ছিলেন। ফুটপাথে আবর্জনার ভ্যাট থাকায় ওই ছাত্রী রাস্তায় নামেন। সেই সময় উল্টো দিক থেকে একটি কালো রঙের গাড়ি চড়ে সপ্তর্ষি-সহ চার যুবক তাঁর সামনে হাজির হন। গাড়ির ভিতরে থাকা যুবকেরা তাঁকে গালিগালাজ করেন ও ওড়না ধরে টানার চেষ্টা করেন। কোনও মতে তিনি লাফ দিয়ে সরে যায়। সপ্তর্ষিই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, তাঁকে গাড়ি চাপা দেওয়া এবং শ্লীলতাহানি, দুই চেষ্টাই চালিয়েছেন অভিযুক্তেরা।
বিধাননগর উত্তর থানায় চার জনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সপ্তর্ষি ছাড়াও বাকি অভিযুক্তেরা হলেন বিধাননগর কলেজের অর্পণ চক্রবর্তী (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তৃতীয় বর্ষ), পলাশ ভট্টাচার্য (ইকনমিক্স, দ্বিতীয় বর্ষ) ও প্রাক্তন কলেজ ছাত্র দেবনাথ দত্ত। তৃণমূল ছাত্রনেতা শুভক্ষণ দত্ত বলেন, “গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। থানায় জেনারেল ডায়েরি করা হয় (জিডি-৬৩৭)।” পুলিশ সূত্রে খবর, সন্ধ্যায় বিধাননগর উত্তর থানায় যান তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। এর পরে ঘটনাটি নিয়ে এফআইআর করা (২৩৬/১২) হয় বলে শুভক্ষণ জানান। সব্যসাচীবাবুর বক্তব্য, তিনি একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ওই ছাত্রীর অভিযোগ ঠিকমতো নেওয়া হচ্ছে না খবর পেয়ে তিনি থানায় যান। তার পরে এফআইআর দায়ের হয়।
এসএফআইয়ের জেলা নেতা সপ্তর্ষি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “যিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁকে চিনি না। আমরা বিধাননগর কলেজের কাছে গাড়ি রেখে চা খাচ্ছিলাম। পরে গাড়ি করে চলে গিয়েছি। এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।” গত সপ্তাহেই বিধাননগর কলেজে এসএফআইয়ের সদস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অর্পণ-পলাশের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গোলমাল হয়েছিল। তার জেরে এফএফআই পথ অবরোধও করেছিল। এফএফআইয়ের অভিযোগ, তার প্রতিশোধ নিতেই মিথ্যা ঘটনায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
পলাশ ও অর্পণের ব্যাপারে কলেজ পড়ুয়াদের একাংশের বক্তব্য, দু’জন আগে এসএফআই করতেন। তৃণমূল কলেজ ইউনিয়ন দখল করার পরে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেন। কিছু দিন আগে তাঁরা এসএফআইয়ে ফিরে আসেন। তৃণমূলে এই দু’জন বিধায়ক সুজিত বসুর অনুগামী বলেই পরিচিত। অভিযোগ অস্বীকার করে বিধাননগরের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি শুভক্ষণ বলেন, “এসএফআই ওই দু’জনকে তৃণমূল করতে পাঠিয়েছিল। আগাম খবর থাকায় ঢুকতে দিইনি।” ঘটনার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার কলেজ-গেটের কাছে তাঁরা সভা করবেন, জানান তৃণমূলের ছাত্র-নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা।এই ঘটনায় অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে এফএফআই। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের বক্তব্য, “মিথ্যা অভিযোগ, মিথ্যা মামলা। পূর্বপরিকল্পিত। কেননা ছাত্রী অভিযোগ জানানোর আগেই তৃণমূল বিধায়ক সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে সেখানে চলে যান!” |