অভিভাবকদের জব্দ করতে শিশুর
গায়ে গরম ঝোল, অভিযুক্ত প্রতিবেশী
ন্ধ্যার অন্ধকারে বাড়ির উঠোনে খেলছিল এক শিশু। হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠল সে। শিশুটির বাবা-মা তখন বাড়িতে ছিলেন না। তার চিৎকার শুনে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি তাঁদের জানায়, “সব জ্বল রহা হ্যায়!”
অভিযোগ, খেলার সময়ে অন্ধকারের মধ্যে ওই শিশুর পিঠে ফুটন্ত গরম ঝোল ঢেলে দেয় এক প্রতিবেশী। শিশুটির অভিভাবকের উপরে পুরনো গোলমালের ‘ঝাল’ মেটাতেই এমন নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীদের। তা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি। অথচ লিখিত ভাবে ঘটনাটির বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে। পিঠের অনেকটা অংশ পুড়ে যাওয়ায় ওই শিশু দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিহোমে ভর্তি। আপাতত এক মাস সেখানেই থাকতে হবে তাকে।
দগ্ধ রোশন।
ঘটনাটি গত শনিবারের। বেকবাগান এলাকার ২ নম্বর আহিরী পুকুর ফার্স্ট লেনের বাসিন্দা মিলন লামা ও আইভি লামার সাড়ে চার বছরের ছেলে রোশন সে দিন খেলছিল আরও কিছু বাচ্চার সঙ্গে। উঠোনের এক ধারে রান্নাঘরে কাজ করছিলেন লামা পরিবারের প্রতিবেশী শাহজাহান খান ওরফে বাবু। অন্ধকারে এক কড়াই ফুটন্ত গরম মাংসের ঝোল শাহজাহান মিলনবাবুর ছেলের গায়ে ঢেলে দেয় বলে অভিযোগ।
পুলিশের দাবি, ঘটনাটির পরে ওই যুবককে স্থানীয় লোকজন মারধর করায় সে অচৈতন্য হয়ে পড়ে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আপাতত সে-ও হাসপাতালে ভর্তি। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ-ইস্ট ডিভিশন) চম্পক ভট্টাচার্য জানান, ওই ব্যক্তিকে পুলিশ উদ্ধার করেনি। অচৈতন্য অবস্থায় তাকে ওই এলাকার লোকজনই হাসপাতালে ভর্তি করান। তিনি বলেন, “ওই যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে ওর উপরে নজর রাখা হচ্ছে। অভিযুক্তের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।”
২ নম্বর আহিরী পুকুর ফার্স্ট লেনে কয়েক কাঠা জায়গায় ছোট-ছোট টিনের চালের ঘরে বসবাস করে কিছু পরিবার। পেশায় একটি চিনে খাবারের রেস্তোরাঁর মালিক মিলনবাবু ও তার পরিবারও তেমনই একটি ছোট ঘরে থাকেন। তার পাশের ঘরেই থাকে শাহজাহান। মিলনবাবুর অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক মত্ত অবস্থায় অন্যান্য প্রতিবেশীদের গালিগালাজ করত। মহিলাদের সঙ্গে অসভ্য আচরণও করে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার প্রতিবাদ করা নিয়েই শাহজাহানের সঙ্গে অনেক দিন ধরে গোলমাল চলছিল লামা পরিবারের।
মিলনবাবুর আরও অভিযোগ, “ওই যুবক এর আগেও তাঁদের এক জনকে রড দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। কথায় কথায় ভোজালি উঁচিয়ে ভয় দেখায় সবাইকে। আমাদের সঙ্গে এই নিয়ে ওর বহু বার গোলমাল হয়েছে। ছেলেটি এক বার আমার বাচ্চার ক্ষতি করে দেবে বলে হুমকিও দিয়েছিল। তা যে সত্যি হবে, ভাবিনি। শনিবার এমন কাণ্ড করার পরেও পুলিশ ওকে গ্রেফতার করল না।”
বুধবার নার্সিংহোমে শিশুটি।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঘটনার সময়ে মিলনবাবুরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। ছেলেটি উঠোনে খেলছিল। হঠাৎ তার কান্না শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। ঘটনাচক্রে শাহজাহানের বোন সায়রার কাছে গিয়েই ঘটনাটি জানায় রোশন। সায়েরার কথায়, “আমরা কয়েকটি পরিবার এখানে একসঙ্গেই থাকি। আমার দাদা সকলের সঙ্গে গোলমাল করে। মেরে আমার স্বামীর মাথাও ফাটিয়ে দিয়েছে দাদা। সব সময়ে নেশা করে থাকে। আমি চাই ওর শাস্তি হোক।”
ঘটনাটি জানতে পরেই শাহজাহানকে মারধর করেন পাড়ার লোকজন। অভিযোগ যায় স্থানীয় কড়েয়া থানায়। তার পর থেকে ওই যুবকের আর কোনও খোঁজ নেই ওই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে। স্থানীয়েরা জানান, শাহজাহান নিজেকে পুলিশের ‘সোর্স’ বলে দাবি করে লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা করত। অভিযোগ, আগেও একাধিক বার নানা কারণে শাহজাহানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
বুধবার দুপুরে ওই নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা যায়, সারা গায়ে ব্যান্ডেজ জড়ানো চার বছরের রোশনের। সোমবার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। নিয়মিত ড্রেসিং করতে হচ্ছে। ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে দক্ষিণ কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র রোশন বলল,“ উসনে জ্বলা দিয়া”।লামা পরিবারের প্রতিবেশীদের অভিযোগ, শনিবার রাত থেকে কয়েক দফায় থানায় গিয়ে লাভ হয়নি। পুলিশ ৩২৬ ধারায় শুধুমাত্র একটি মামলা চালু করেছে।

—নিজস্ব চিত্র
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.