সাঁইথিয়া। রেল স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড। দেওয়াল থেকে ল্যাম্পপোস্ট। ছেয়ে গেছে ওই দৃশ্যে।
শহরের নানা প্রান্তে বড় বড় ফ্লেক্সে ছড়িয়ে পড়েছে ওই দৃশ্য। নৃশংস যুদ্ধের দৃশ্য। ভয়াল, রক্ত-ঝরা। একঝলক দেখলে মনে হয় যেন, বলিউডের কোনও মারকাটারি নতুন ফিল্মের পোস্টার। তবে একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই কিন্তু, ওই ‘ধ্বংসে’র চিত্রের মধ্যেই খোঁজ মিলবে অন্য ইঙ্গিতেরও।
ওই ছবির মধ্যেই আছে স্বর্গলোকের শান্তি। যুদ্ধের বিনাশেই মিলবে স্বর্গের শান্তি।
এ বারের দুর্গা পুজোর এটাই থিম সাঁইথিয়া অরুণোদয় ক্লাবের। মণ্ডপে ভিড় টানতে প্রতি বারই দুর্গাপুজোয় নতুন কিছু চমক আমদানি করে এই ক্লাব। এই দুনিয়ার নানা প্রান্ত প্রতিনিয়ত ঝলসে উঠছে সন্ত্রাসের বীভৎসতায়। সেই সন্ত্রাসের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে মণ্ডবে ব্যবহার করা শতাধিক পুতুল। এই পুতুলগুলিকেই ১৪ ফুট উচ্চতার বিশালাকার অসুর মূর্তিতে রূপ দেওয়া হয়েছে। ওই অসুরবাহিনীকে বিনাশ করতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন শক্তিরূপিনী দেবী। দেবীকে এখানে বিশ্বমাতার আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দানব বাহিনীকে বধ করতে এগিয়ে এসেছেন বিশ্বমাতা, তিনি উড়ন্ত অবস্থাতেই আক্রমণ হেনেছেন। তাঁর হাতেই শেষমেষ বধ হয়েছেন বিশালাকায় অসুর। পুরো ঘটনাটাই সুন্দর ভাবে দৃশ্যায়িত করছে এই ক্লাব। |
প্রথম পর্বের এই দৃশ্যায়নের আগেই দর্শকদের জন্য আছে আরও চমক। প্রবেশ পথেই বানানো হয়েছে মহিষাসুরের গর্ভধারিনী মহিষের ১৫ ফুট ব্যাসার্ধের এক বিশাল মাথা। ওই মহিষের মুখের এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ পথ, আরেক প্রান্তে বাহির পথ। প্রথম পর্বের দৃশ্যায়নের পর থাকছে দ্বিতীয় পর্বও কল্পিত হিমালয়ের পাদদেশে স্বর্গলোকে দেবীপুজো।
অরুণোদয় ক্লাবের তেইশ তম এই দুর্গাপুজোর বাজেট ৫ লক্ষ টাকা। পুজোর পরিকল্পনা করেছেন পিনাকী দত্ত। তিনি ক্লাবের পুজো কমিটির সম্পাদকও। বহরমপুর, কান্দি, বোলপুর, সাঁইথিয়া প্রভৃতি জায়গার বেশ কয়েকজন শিল্পী মিলে এই কাজ করছেন। পিনাকীবাবু বলেন, “মর্ত্যে যে সন্ত্রাস চলছে, তারই প্রতিফলন দেখাতে চেষ্টা করেছি। আছে তার বিনাশেরও রূপ।”
পুজোর এই উৎসবে এখন শুধু অপেক্ষা। কবে বিশ্বমাতার হাতে অসুর দমন শেষে ‘স্বর্গ-সুখ’ আসে। |