বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে অপমৃত্যু হল এক কাটোয়া টেলিফোন এক্সচেঞ্জের এক কর্মীর। বছর সাঁইত্রিশের ওই যুবক ‘প্রেমিকা’র বাপের বাড়িতে দাঁড়িয়ে নিজের মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে গুলি করেন বলে ওই বাড়ির লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মঙ্গলকোটের মাজিগ্রামে ঘটনাটি ঘটে। যুবকের বাড়ি মঙ্গলকোটেরই ভাল্যগ্রামে। বুধবার কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস বলেন, “মাজিগ্রামের ওই মহিলার মা অভিযোগে জানিয়েছেন, বাড়ির দোতলায় ওই যুবক আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পরে তিনি মারা যান।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাল্যগ্রামের উত্তরপাড়ার ওই যুবক বিবাহিত। তাঁর মেয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। বছর দুয়েক আগে নদিয়ার মায়াপুরে বেড়াতে গিয়ে পাড়ারই এক বিবাহিত মহিলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মহিলার স্বামী সিআরপিএফ কর্মী। কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকেন। তাঁদের একটি ১১ বছরের ছেলেও আছে। |
উত্তরপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মাসখানেক বাড়িতেই দু’জনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেছিলেন মহিলার স্বামী। তাতে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। তখনই ঠিক হয়, স্বামী বাড়িতে না থাকলে মহিলা মাজিগ্রামে বাপের বাড়িতে থাকবেন। সেই মতো গত ২০ দিন ধরে তিনি মাজিগ্রামেই ছিলেন। আগেই তাঁর মোবাইল পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। সে কারণে যুবকটি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, মহিলা বাপের বাড়িতে চলে যাওয়ার পরেও তাঁর ‘প্রেমিক’ সেখানে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। তা কিন্তু পেরে ওঠেননি। ইতিমধ্যে মহিলার এক কাকা বর্ধমানে একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। মঙ্গলবার বাড়ির পুরুষেরা সেখানে চলে গিয়েছিলেন। সে খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ যুবকটি মাজিগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে চলে আসেন। সেখান থেকে সোজা মহিলার বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহিলা ছিলেন দোতলায়। যুবক সেখানে গিয়ে দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে। মহিলা রাজি হননি। ইতিমধ্যে বাড়ির অন্য মহিলারাও এসে চেঁচামেচি শুরু করে দেন। যুবক মহিলার হাত ধরে ছিলেন। হাত ছাড়িয়ে তিনি নীচে চলে যান। তখনই হঠাৎ রিভলভার বের করে শূন্যে গুলি ছোড়েন যুবকটি। মহিলার মা পুলিশকে বলেছেন, “ভয় পেয়ে আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে যাই। তার পরে সদর দরজার শিকল তুলে দিয়ে লোকজন ডাকছিলাম। এর পরেই ফের গুলির আওয়াজ।”
বাড়ির লোকজনের কথা অনুযায়ী, ফের দরজা খুলে ঢুকে উপরে উঠে তাঁরা দেখেন, দোতলার সিঁড়ির ধাপে যুবকের রক্তাক্ত দেহ পড়ে। তবে তখনও তিনি মারা যাননি। মঙ্গলকোট থানা থেকে পুলিশ এসে তাঁকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তারা আর জি কর হাসপাতালে পাঠায়। বুধবার রাতে সেখান থেকেই যুবকের মৃতদেহ ফেরে। গোটা ঘটনা নিয়ে দুই বাড়ির লোকজন কোনও কথা বলতে চাননি। পুলিশের অনুমান, মহিলা তাঁর সঙ্গে যেতে রাজি না হলে আত্মঘাতী হবেন বলে যুবকটি মনস্থ করেই রেখেছিলেন। সে কারণেই রিভলভার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ সেটি বাজেয়াপ্ত করেছে। |