পুলিশের উপরে হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হল ৬ জন তৃণমূল কর্মীকে। ধৃতদের কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল ও ১১টি তাজা বোমা মিলেছে বলে জানায় পুলিশ। ওই ঘটনায় দু’জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ধৃতেরা হলেন শিবেশ মুখোপাধ্যায়, অজয় ঘোষ, বুদ্ধদেব ধীবর, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, সুদেব মাঝি ও মন্টু মাঝি। পুলিশের দাবি, খেঁড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক দেবকুমার ধারার নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। অভিযুক্তেরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী -সমর্থকদের একাংশের অবশ্য মত, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বুধবার সকালে দেবকুমারবাবুর নেতৃত্বে গ্রামের ৬ জন তৃণমূল কর্মী দলের বর্ধমান জেলার অন্যতম পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার কথা জানান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের জুনে খেঁড়ুয়া গ্রামের কাছে খুন হন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। এই ঘটনার পরে গ্রামে অশান্তি শুরু হয়। গ্রামছাড়া হন কংগ্রেস ও তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মী -সমর্থক। বিধানসভা ভোটের আগে থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। ভোটের পরে ঘরছাড়া হন খেঁড়ুয়া গ্রামের প্রায় ৪৫ জন সিপিএম কর্মী। গত সেপ্টেম্বরে সিপিএমের ঘরছাড়াদের একাংশ স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে মীমাংসা করে গ্রামে ফিরেছেন। |
পুলিশ জানায়, সোমবার ঘরছাড়া আরও ৮ জন সিপিএম কর্মী বাড়িতে ফিরতে চেয়ে মঙ্গলকোট থানায় আবেদন করেন। সেই মতো পুলিশ মঙ্গলকোটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ সিপিএমের মানিক ধীবর, পালন ধীবর, সনৎ কর্মকার, চরণ মাঝি, শ্যামল দাস, মাধু দাসেরা বাড়ি ফেরেন। মঙ্গলকোটের সিপিএম বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরীর অভিযোগ, “দিনভর তাঁদের কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টা থেকে তৃণমূল কর্মী পরিচয়ে কিছু যুবক বাড়িতে ঢুকে হুমকি দেয়। ভয়ে তাঁরা ফের ঘর ছেড়েছেন।” ঘরছাড়াদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, রাত নামতেই মুখে গামছা ঢাকা এক দল যুবক বাড়িতে ঢুকে কর্তার খোঁজ করতে থাকেন।
পুলিশের দাবি, বাড়িতে ঢুকে হুমকি দেওয়ার আগে ওই সব লোকজন এলাকায় বোমাবাজিও করে। খবর পেয়ে পুলিশ খেঁড়ুয়া গ্রামে যায়। গ্রামের রাধামাধবতলায় যেতেই তৃণমূলের সমর্থকেরা বাধা দেয়। বাধা হঠিয়ে যেতে গেলে পুলিশকে লক্ষ করে ইট -পাটকেল ছোড়া হয়। তাতে কমলেশ সিংহ ও মাশারফ মীর নামে দু’জন পুলিশকর্মী জখম হন। পুলিশের আরও দাবি, এই ঘটনার সময়ে মাঠে বোমাবাজি হয়।
বুধবার দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশের উপরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, পুলিশের সঙ্গে গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবকুমার ধারার মা বাসন্তীদেবীর অভিযোগ, “সিপিএমের আমলে আমাদের গ্রামের ছেলেদের মিথ্যা অভিযোগে জড়ানো হত। একই ভাবে তৃণমূলও এলাকার ছেলেদের ফাঁসাতে শুরু করল।” দেবকুমারবাবুর অভিযোগ, “আমাদের দলের ব্লক সভাপতির সঙ্গে সিপিএমের আঁতাত রয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে।” ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য বলেন, “শান্তি -শৃঙ্খলা বজায় রেখে যে কেউ গ্রামে থাকতে পারেন। সেই মতো খেঁড়ুয়া গ্রামেও ঘরছাড়ারা ফিরেছিলেন। সেখানে কেউ কেউ বাধা দেওয়ায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।” দলের অন্যতম জেলা পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক বলেন, “ঘটনার কথা জেনেছি। দলীয় নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাব।” বুধবার কাটোয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। |