দক্ষিণ ভারত থেকে নেপালের হিন্দু মন্দির। রয়েছে পুরনো রাজপ্রাসাদের নকশা। থিমের দৌড়ে নেমেছে জামুড়িয়ার খনি অঞ্চলের সব পুজো কমিটিই। সব উদ্যোক্তাদের মুখে একই কথা, “থিম দিয়ে রুচি চেনা যায়। দর্শক আকৃষ্ট হয়।” আর তাই কথার ভিতরের কথা, থিম যত ভাল, ভিড় তত বড়। আর ভিড় টানতেই থিমের দৌড়ে সামিল সব পুজো কমিটি।
ইস্ট কেন্দা সর্বজনীন দুর্গা পুজো। এ বছর পা দিল ৩৫ বছরে। নেপালের একটি হিন্দু মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। প্রতিমার গায়ে থাকবে ডাকের সাজ। কমিটির সম্পাদক মনু সেনগুপ্ত জানান, পুজোর সঙ্গে যুক্ত যারা, সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন নতুন কোনও থিমের জন্য। সারা বছর ধরেই চলে জল্পনা-পরিকল্পনা। একটাই আশা, পুজো দেখতে আসা মানুষজন যাতে একটু বেশিক্ষণ থাকেন তাঁদের মণ্ডপে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও যাতে হারিয়ে যান উদ্যোক্তাদের মণ্ডপ ভাবনায়। যাতে আর একটু বেশি ভিড় হয় নিজেদের পুজোয়। মনুবাবুর বক্তব্য, থিম দিয়েই বোঝা যায় রুচির উৎকর্ষতা।
জামুড়িয়ায় বেশ বড় একটি সর্বজনীন পুজোর উদ্যোগ নেয় পরাশিয়া জনকল্যাণ সমিতি। পুজো কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮০ সালে শুরু হয়েছিল এই পুজো। সম্পাদক রমেশ ভকত জানান, এ বার তাঁদের মণ্ডপ সজ্জার মূল থিম দক্ষিণ ভারতের মন্দির। সেখান কার সূক্ষ্ম স্থাপত্যের অনুকরণে সেজে উঠবে তাঁদের মণ্ডপ। বানানো হয়েছে ১৫ ফুট উঁচু প্রতিমা। রথের উপর থাকবে সেই প্রতিমা। দেবীর রণসাজে নিহিত থাকবে মহিষমর্দিনীর মিথের থিম। রমেশবাবু বলেন, “যে কোনও দর্শক এখানে বেশি সময় কাটাতে বাধ্য। প্রতিবারই আমাদের এই গর্ব অক্ষুন্ন থাকে।”
তবে এলাকার সবচেয়ে বড় পুজো যে তাঁদেরই, এমনই দাবি সাতগ্রাম সর্বজনীন পুজোর উদ্যোক্তাদের। সাতগ্রাম চণ্ডী ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই পুজো অবশ্য মাত্র ৫ বছরের পুরনো। উদ্যোক্তারা জানান, এ বারের থিম ভারতের পুরনো রাজবাড়ির আবহ। প্রথমে চট দিয়ে মোড়া হবে গোটা মণ্ডপটাই। শোলা কেটে ছোট ছোট ইটের মতো করে বসানো হবে তার উপর। তাতে ইট রঙ করা হবে। রাজবাড়ির পাথরের মূর্তির আদলে তৈরি হচ্ছে মাটির মূর্তি। পুজো কমিটির সম্পাদক শ্যামল বাউরি জানান, পুজো মণ্ডপে ঢোকার মুখে থাকবে ৫টি আলোক তোরণ। আনুষঙ্গিক আলোকসজ্জায় থাকবে সমসাময়িক ঘটনার থিম। তাঁর কথায়, “গ্রামে পারিবারিক পুজোর চল থাকলেও আমজনতা তাতে যোগ দিতে পারে না। কিন্তু এই পুজো এক্কেবারে সর্বজনীন। সব থেকে বেশি দর্শক টানে এই পুজো।”
লোয়ার কেন্দা কোলিয়ারির সর্বজনীন পুজো এ বার ৪৪ বছরে পড়ল। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করতে ব্যস্ত শিল্পীরা। মূর্তিতেও থাকছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ষষ্ঠীর দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন স্থানীয় শিল্পীরা। কেন্দা ফুটবল মাঠে কেন্দা সর্বজনীন দুর্গাপুজোর বয়স ২৪। মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ তৈরি করছেন এঁরাও। পুজো কমিটির পক্ষে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নবমী ও দশমীর দিন থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিনি জানান, গ্রামে চারটি প্রায় দু’শো বছরের পুরনো পারিবারিক পুজোর রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু বাড়ির পুজোয় যাঁরা আনন্দ করতে পারেন না, তাঁদের কথা ভেবে এই পুজো।”
বেলবাঁধ কোলিয়ারির সর্বজনীন দুর্গোৎসব শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। এ বারের থিম, কৈলাশ থেকে নৌকায় চড়ে মা দুর্গার মর্ত্যে আগমন। পাশাপাশি অন্য একটি নৌকায় চড়ে মায়ের সঙ্গেই মণ্ডপে হাজির হচ্ছে অসুরও। পুজো কমিটির সম্পাদক কৈলাস গোপ জানান, প্রতি বছরের মতো নবমীর দিন থাকবে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। দশমীর দিন দেওয়া হবে পুরস্কার। |