নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
সম্প্রতি শিলিগুড়ি থানার একটি বধূ নির্যাতনের মামলায় তদন্তকারী অফিসার কেস ডায়েরি আদালতে সময় মত জমা না দেওয়ায় অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে যান। ঘটনাটিকে দুর্ভাগ্যজনক অ্যাখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন দার্জিলিং জেলার আদালতের দায়রা বিচারক একে কাপরি। তার পরেই তিনি গত ৫ অক্টোবর প্রত্যেক মামলার ‘কেস ডায়েরি’ যাতে সময়মত আদালতে জমা পড়ে তা শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে ফের যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়ে আদালতের তরফে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আদালতের ওই নির্দেশ পাওয়ার পর অস্বস্তিতে পড়েছেন কমিশনারেটের পুলিশ অফিসারেরা। খোদ পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলছেন, “কোনও মামলার ক্ষেত্রে এমটা হওয়া একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। বিষয়টি আমি দেখছি। আর আদালতের নির্দেশ পুরোপুরি পালন করা হবে। আর কেন ওই মামলার কেস ডায়েরি সময়মত জমা পড়েনি তাও দেখা হবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে কমিশনার শিলিগুড়ি থানার আইসি-র কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক থানার, ফাঁড়ির দায়িত্বে থানা আইসি, ওসিদের আদালতের ওই নির্দেশ পালন করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। |
সমাজকর্মী অনুরাধা তলোয়ার। দলমোড়ে রাজকুমার মোদকের ছবি। |
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অধীণে শিলিগুড়ি, প্রধাননগর, মাটিগাড়া, বাগডোগরা এবং ভক্তিনগর থানা রয়েছে। এর আওতায় আবার বেশ কিছু পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। সব মিলিয়ে কমিশনারেটে প্রতিদিন কয়েকশো অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে কিছু অভিযোগ দুই পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে মিটে গেলেও বাকিগুলির মামলা হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, যে কোনও মামলা হওয়ার পরেই এক তদন্তকারী অফিসার নিয়োগ করা হয়। মামলার গুরুত্ব বিচার করে এসিপি বা ডিএসপি থেকে সহকারি সাব ইন্সপেক্টর পর্যায় অবধি তদন্তকারী অফিসার নিয়োগ হয়। ক্রমিক নম্বর ভিত্তিতে মামলাটির গতিপ্রকৃতি, তদন্তের অগ্রগতি, জিজ্ঞাসাবাদের সামগ্রিক তথ্য, বাজেয়াপ্ত করা জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ তদন্তকারী অফিসারকে কেস ডায়েরিতে লিখে রাখতে হয়। কেস ডায়েরি ‘পাবলিক ডকুমেন্ট’ না হওয়ায় আদালত এবং অফিসার ছাড়া তা দেখার কারও অধিকার নেই। মামলার শেষ পর্যায়ে চার্জশিটের সঙ্গে অন্যান্য নথিপত্রের পাশাপাশি কেস ডায়েরি আদালতে জমা করতে হয়। ওই ডায়েরি দেখে জামিন থেকে শুরু করে নানা নির্দেশ দিয়ে থাকেন বিচারকেরা। সেখানে বধূ নির্যাতনের মত গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বারবার বলার পরেও কেস ডায়েরি কেন জমা পড়ল না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আদালত। ৫ অক্টোবর (ওর্ডার নম্বর-৪) তা বিস্তারিত লিখে দেন বিচারক কাপরি। এই বিষয়ে শিলিগুড়ি থানার আইসি-র ভুমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারক। আদালত সূত্রের খবর, গত অগস্ট মাসে শহরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর স্ত্রী গোলমাল আদালত অবধি গড়ায়। ওই ব্যক্তি গত অগস্ট মাসে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করার পর তাঁর স্ত্রী স্বামীর কাকা-কাকীমা-সহ শ্বশুড়বাড়ির লোকজনদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। শিলিগুড়ি থানায় মামলা নথিভুক্তও হয়। বিষয়টি এখনও আদালতের বিচারাধীন। বর্তমানে অভিযোগকারী মহিলা হুগলিতে আছেন। এরমধ্যে ওই ব্যক্তির কাকা-কাকিমা অন্তর্বতী জামিনের জন্য জেলা আদালতের দ্বারস্থ হন। শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, “অন্তর্বতী জামিনের আবেদনের পর আদালত বেশ কয়েকবার কেস ডায়েরি চেয়ে পাঠায়। তা না পৌঁছানোয় শেষ অবধি অভিযুক্তেরা জামিন পান। তবে বিষয়টি ভালচোখে নেননি বিচারক। বিচারকের রায়েই তা স্পষ্ট হয়েছে।” |