নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বেআইনি ভাবে গ্যাংওয়ে বানানোর অভিযোগ নিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভা তদন্তে নামতেই সুর বদলে ফেললেন প্রোমোটার অনিল অগ্রবাল। মঙ্গলবার সেবক রোডে সমাপ্তির মুখে থাকা অনিলবাবুর বাণিজ্যিক ভবনে যান পুরসভার ইঞ্জিনিয়ররা। তদন্তে দেখা যায়, বিনা অনুমতিতে গ্যাংওয়ে শুধু নয়, বিশাল ভবনের ছাদে টিনের ছাউনি, পার্কিংয়ের জায়গা অন্য কাজে ব্যবহার হয়েছে। পুরসভার তরফে সঙ্গে সঙ্গেই নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা সাহা বলেন, “বাম আমলে ওই ভবনের নকশা অনুমোদন হয়। সেখানে গ্যাংয়ে, টিনের চাউনি দেওয়ার বিষয়টি নেই। তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন নির্মাণ চলছে কী করে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। পুরসভার ইঞ্জিনিয়রদের একাংশ কী করেন? পুরসভার কী ১৮ মাসে বছর নাকি? আমি ওই ভবনের বেআইনি অংশ ভেঙে দিতে বলেছি।” মেয়র পারিষদ পুরসভার ইঞ্জিনিয়রদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় পুর মহলে হইচই পড়ে গিয়েছে। বিল্ডিং বিভাগের কর্মী-অফিসারদের একাংশের অভিযোগ, শহরের প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীদের একাংশের যোগসাজশে শিলিগুড়ির বাণিজ্যিক এলাকা সেবক রোডের ধারের ওই বেআইনি ভবনে তদন্তে যাওয়া যায়নি। উপরন্তু, বিল্ডিং বিভাগের কয়েকজনের প্রশ্ন, দুদিন আগে, শনিবার ওই ভবনের সামনে পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল সহ অন্তত ৪ জন কাউন্সিলর গিয়েছিলেন। |
তাঁরা ভবনের পাশের একটি পাঁচিল ভেঙে দেওয়ার কাজ করান। তৃণমূলের একজন প্রাক্তন কাউন্সিলরও সেখানে ছিলেন। অথচ ওইখানে যে বিনা অনুমতিতে গ্যাংওয়ে হচ্ছে তা তাঁরা টের পেলেন না? পাশাপাশি, বাণিজ্যক ভবনের অন্যতম কর্মকর্তা অনিলবাবু হলফনামা দিয়ে পাঁচিলটি নিজে ভাঙবেন বলা সত্ত্বেও পুরসভা নিজের খরচে তা ভাঙল কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মেয়র পারিষদ কৃষ্ণবাবুর ভূমিকা নিয়েও পুরসভার অন্দরে চলছে নানা জল্পনা। এ ব্যাপারে কৃষ্ণবাবু বলেন, “এ ভাবে ভাবা ঠিক নয়। ওই দিন রাস্তা চওড়া করতে এলাকার কিছু দখলদারদের সরিয়ে দিতে পুরসভা অভিযানে নামে। সে সময় ওই পাঁচিলটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার কাজের টেন্ডারও হয়েছে। শহরবাসীর স্বার্থেই দ্রুত তা করার কথা। ওখানে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে বলে আমার কাছে অভিযোগ ছিল না। ওটা বিল্ডিং বিভাগকেই দেখতে হবে।” যাঁদের আমলে ওই ভবনের নকশা অনুমোদন হয়েছে, সেই সিপিএমের বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম কিন্তু, বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। তিনি বলেন, “লেনদেনের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে বেআইনি নির্মাণ ভাঙা উচিত।” পুরসভার ইঞ্জিনিয়ররা কেন নজরদারি চালাননি? পুরসভার কার্যনির্বাহী বাস্তুকার চিত্তরঞ্জন বর্মন বলেন, “কর্মীর অভাব রয়েছে। এ দিনই চিঠি পাঠিয়ে অবৈধ নির্মাণের অংশে কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ঘটনা হল, সোমবার ওই ভবনের মালিক ততা প্রোমোটর অনিল অগ্রবাল বলেছিলেন, তাঁর কাছে নকশা রয়েছে। সেই অনুযায়ী তিনি গ্যাংওয়ে বানাচ্ছেন। এদিন তিনি বলেন, “আমার ভুল হয়েছে। বুঝতে পারিনি। নকশা সংশোধন করে ওই গ্যাংওয়ে রাখা সম্ভব কি না তা পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাব। কর্তৃপক্ষ না চাইলে তা খুলে দেওয়া হবে।” সেবক রোডের ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, শুধু অনিলবাবু নন, ওই রাস্তার উপরে একাধিক বেআইনি নির্মাম চলছে। সম্প্রতি মেয়র হোটেলে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে পথে নামেন পুর চেয়ারম্যান নান্টু পাল। তা নিয়ে তদন্তের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ব্যবসায়ীরা। অথচ ওই হোটেলের বেআইনি নির্মামের অভিযোগকে পুরসভা গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে ব্যবসায়ীদের অনেকেরই অভিযোগ। হোটেলের তরফে কোথাও বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে না বলে দাবি করা হয়েছে। ওই এলাকার কাউন্সিলর সিপিএমের কমল অগ্রবাল বলেন, “অনিল অগ্রবালের বেআইনি নির্মাণ শুধু নয়, মেয়র হোটেলেও বিধি ভেঙে কাজ হয়েছে। তাও ভেঙে দিতে হবে।” পাশাপাশি, পুরসভা সূত্রের খবর, অনিলবাবু শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের মধ্যে আরেকটি বাণিজ্যক ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বিধি ভেঙে গ্যারেজে দোকান করেছেন বলে অভিযোগ। বর্ধমান রোডে গোল্ডেন প্লাজা লাগোয়া এলাকায় একটি বহুতল বিনা অনুমতিতে বানানো হচ্ছে কী ভাবে সেই প্রশ্নেও কাউন্সিলরদের একাংশ সরব হয়েছেন। ওই সব কটি বেআইনি নির্মামের ক্ষেত্রে কে বা কারা জড়িত তা খুঁজে বার করতে তদন্তের দাবি উঠেছে। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তও বলেন, “বেআইনি বিল্ডিংয়ের ব্যাপারে আপস নয়। সব ভেঙে দেওয়া হবে।” কিন্তু, কবে থেকে ভাঙা হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। |