শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের আওতাধীন এলাকায় সজলধারা প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের বার্তা পেয়ে পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক (এইও) জংবাহাদুর সুব্বার নেতৃত্বে তদন্তকারী দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক।
সজলধারা প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত খবর মঙ্গলবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ দিন শিলিগুড়িতে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সংবাদপত্রে সজলধারা সংক্রান্ত খবর দেখেছি। যে সব অভিযোগ রয়েছে, তা গুরুতর। বামেদের আমলেই ওই প্রকল্পের কাজ হয়েছে। এখন সজলধারা প্রকল্প বন্ধ। তবে, রাজ্য সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘ফাটাপুকুর রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে সিপিএমের নেতা-নেত্রীদের একাংশের যোগসাজশ থাকার অভিযোগও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “শিলিগুড়ির একাধিক চা বাগান ও গ্রামাঞ্চলে সজলধারা প্রকল্পে নয়ছয়ের অভিযোগ রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হবে।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রায় এক বছর ধরে বহুবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কেন সজলধারা সংক্রান্ত যাবতীয় ফাইল তাঁর কাছে পৌঁছয়নি, সেই প্রশ্নেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলাশাসক। তাঁর মন্তব্য, “এ সব নিয়ে এখন কিছু বলছি না। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে যা বলার বলব।’’
শিলিগুড়িতে গ্রামাঞ্চল ও চা বাগান এলাকায় নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য সজলধারার কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। এ যাবত ২৮টি প্রকল্প বাবদ বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা। ২৭টি প্রকল্প চালু হয়েছে। কিন্তু, ওই সব প্রকল্পের জমি সংগ্রহ, নলকূপ বসানো, পাইপ, ট্যাঙ্ক, পাম্পঘরের আসবাব কেনায় ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক তদন্তের নির্দেশও দিয়েছে। তা সত্ত্বেও তদন্ত এগোয়নি বলে অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সিপিএমের অভিযুক্ত নেতানেত্রীরা অবশ্য অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন। কিন্তু, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি যে ঠিকঠাক কাজ করেনি, সে কথা দার্জিলিং জেলা সিপিএমের একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমাদের দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে অনেক জায়গায় প্রকল্পের কাজের মান ভাল নয় বলে অভিযোগ শুনেছি। যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই কাজ করেছে, তাদের দিয়ে তা করিয়ে নিতে হবে।”
মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, চম্পাসারি ও চা বাগান এলাকার ভুক্তভোগীদের অনেকেরই বক্তব্য, “একেকটি প্রকল্পে গড়ে ১ কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ। নিম্নমানের কাজ করার জন্য গড়ে ৩০-৩৫ লক্ষ টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটাই খতিয়ে দেখা হোক। তার পরে কাগজে-কলমে যা করার কথা, ত ওই সংস্থাকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া হোক।” |