বসিয়ে রাখলেই লাভ দেখছে মালিক পক্ষ
ধর্মঘট না-হোক, বাসের খরা রাস্তায়
র্মঘট হলে রাস্তায় বাস থাকে না। কিন্তু মালিক সংগঠন তো লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত বাস ধর্মঘট স্থগিত করে দিয়েছে। তবু রাস্তায় বাস কোথায়?
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে মঙ্গলবার থেকে লাগাতার বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বেসরকারি বাসের মালিকদের একটি সংগঠন। সোমবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ওই সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত তাঁরা বাস ধর্মঘট স্থগিত রাখছেন। বাস ও মিনিবাসের অন্য দু’টি মালিক সংগঠনও মঙ্গলবার নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর ‘বার্তা’ পাওয়ার পরে তারাও আপাতত লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত ধর্মঘটে না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু সংগঠনের নেতারা যে-সিদ্ধান্তই নিন, মালিকদের বেশির ভাগই কিন্তু বাস নামাননি। তাই আমজনতা মঙ্গলবার রাস্তায় বেরিয়ে বেসরকারি বাসের দেখা তেমন পাননি। এবং এ বার বেসরকারি বাসের সঙ্গে সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মিনিবাসও। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাংলার মানুষ স্বস্তি পেয়েছেন। বাস-মালিকদের অসুবিধের কথা মুখ্যমন্ত্রী জানেন। তিনি ভাবনাচিন্তা করছেন।” মন্ত্রী যা-ই বলুন, মানুষ কিন্তু রাস্তায় নেমে স্বস্তি পাননি। কারণ, পর্যাপ্ত বাসের দেখা মেলেনি। বাস পাওয়া যাবে কী ভাবে? পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “অল্পবিস্তর খারাপ বাসগুলিকে মেরামত করে অন্তত পুজোর সময় রাস্তায় নামানোর জন্য আমরা বাস-মালিকদের অনুরোধ করেছি।”
যাঁরা বাস নামাননি, সেই সব মালিকের বক্তব্য, নেতারা মুখ্যমন্ত্রীকে কী বলেছেন, তা তাঁরা জানতে চান না। জানতে চান না পরিবহণমন্ত্রীর অনুরোধের বৃত্তান্তও। তাঁদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এই অবস্থায় বাস নামিয়ে তাঁরা লোকসান বাড়াতে চান না। ভাড়া না-বাড়লে তাঁরা যে আর বাস নামাবেন না, পরিষ্কার করে দিয়েছেন ওই মালিকেরা। তাঁদের কেউ কেউ বাস বিক্রি করে দেওয়ার কথাও ভাবছেন। কথা বলছেন ভিন্ রাজ্যের ক্রেতাদের সঙ্গেও। এক মালিকের কথায়, “অনেকে তো ভিন্ রাজ্যের ক্রেতার জন্য অপেক্ষা না-করে ‘কাটাই’-এ পাঠিয়ে দিচ্ছেন বাস।” কাটাই মানে বাসের এক-একটি যন্ত্রাংশ খুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেওয়া।
বাস-মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস সূত্রের খবর, লোকসানে চলার জন্য বড় কয়েকটি রুটে বাস চলা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেমন, শ্যামবাজার থেকে বসিরহাট। ওই রুটে একটি বাসও চলছে না বলে মালিকদের দাবি। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতারা জানান, ৩বি, ৩ডি এবং ৩ডি/১ রুটে বাস চলার কথা ১০০টি। এখন চলছে মাত্র ৬১টি। কোনও কোনও রুটের অবস্থা আরও খারাপ। ওই সব রুটে বাসের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম হয়ে গিয়েছে। বেহালা-হাওড়া (১২সি) রুটে ৫০টিরও বেশি বাস চলার কথা। ওই রুটে বাস বসিয়ে রাখা এক মালিক জানান, সেই জায়গায় মঙ্গলবার মাত্র ২০টি বাস চলেছে। পুজো ক’দিন কোনও রকমে বাস চালিয়ে ফের তা বসিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন অনেকে। অধিকাংশ মালিকই মনে করেন, বাস চালালে এখন যা আয় হয়, তার তুলনায় বাস বসিয়ে রাখলেই লাভ বেশি!
তা হলে যাঁরা বাস চালাচ্ছেন, তাঁদের স্বার্থ কী?
রাস্তায় বাস নামিয়েছেন, এমন এক মালিক বলেন, “নতুন বাস কিনেছি। বাসের জন্য ব্যাঙ্কঋণ নিতে হয়েছে। প্রতি মাসে সেই ঋণের কিস্তির টাকা শোধ করতে হচ্ছে। নইলে ব্যাঙ্ক বাস তুলে নিয়ে যাবে। বাস চালিয়ে লাভ হচ্ছে না। সব টাকা ব্যাঙ্কেই চলে যাচ্ছে।” তাঁদেরও বক্তব্য, একমাত্র ভাড়া বাড়ালেই বাঁচতে পারে বাস শিল্প।
রাজ্যের নতুন সরকার ভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে। তবে পরিবহণ দফতরের ছোট-বড় সব কর্তাই বলছেন, “পরিবহণের এখন যা অবস্থা, তাতে ভাড়া বাড়াতেই হবে। এবং পুজোর আগে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে বাস তুলে নেওয়ার হিড়িক অনেকটাই আটকানো যেত।”
তেমন পরিকল্পনা সরকারি স্তরে এখনও নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ধর্মঘট হয়তো আপাতত হল না। কিন্তু পুজোর মুখে আমজনতার ভোগান্তি রয়েই গেল।
রুট পারমিট আছে* মঙ্গলবার নামল*
বেসরকারি বাস
সল্টলেক-হাওড়া
বিরাটি-ধর্মতলা
ব্যারাকপুর-ধর্মতলা
ডায়মন্ড হারবার-ধর্মতলা
রামরাজাতলা-ধর্মতলা
চ্যাটার্জিহাট-ধর্মতলা
৫৭
৪৫
৫০
৮০
৩৫
১৬
৪৫
৩৩
৩০
৪০
২২
মিনিবাস
নাকতলা-হাওড়া
যাদবপুর-ডালহৌসি
গড়িয়া স্টেশন-ডালহৌসি
ডানলপ-ডালহৌসি
বি গার্ডেন-ধর্মতলা
রামরাজাতলা-রাজাবাজার
৪০
১৫
৪১
২২
২৪
১৫
১৭

২৫
১৩
১৪
* বাসের সংখ্যা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.