কেন্দ্রীয় সাহায্যে ‘সবুজ বিপ্লব’ করতে গিয়ে মরসুমের গোড়াতেই ধাক্কা খেল রাজ্য। এ বছর খরিফ মরসুমে ওই প্রকল্পে ধান চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল, তার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। ওই জমির কোথাও কৃষকেরা নিজেদের মতো করে চাষ করেছেন, কোথাও বা জমি ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। কৃষি দফতরের প্রাথমিক হিসেব, এ জন্য অন্তত ৩০ হাজার টন চাল এ বার কম উৎপাদন হবে।
বর্ষার খামখেয়ালি আচরণের জন্য রাজ্যে খরিফ ধানের ফলনে ঘাটতি হবে বলে কৃষি দফতরের কর্তারা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। গত বছর খরিফ মরসুমে ১০৭ লক্ষ টন চাল পাওয়া গিয়েছিল। এ বার ওই পরিমাণ ৯২ লক্ষ টনের মতো হবে বলে কৃষি দফতরের অনুমান। সবুজ বিপ্লবের জন্য নির্বাচিত জমির পুরোটায় চাষ করা গেলে এই ঘাটতি কিছুটা কমানো যেত বলে মনে করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। কিন্তু তার আর সুযোগ নেই।
সাতের দশকে উত্তর ভারতের মতো সবুজ বিপ্লবের সুফল এ বার যাতে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিও পায়, সে জন্য প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ‘দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব’ কর্মসূচি চালু করেন। খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করাই ছিল ওই প্রকল্পের লক্ষ্য। সবুজ বিপ্লবের জন্য নেওয়া জমিতে চাষের জন্য সরাসরি সাহায্য করেন কৃষি দফতরের কর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের তত্ত্বাবধানেই কৃষকেরা চাষ করেন। সারের খরচ ছাড়া চাষের অন্য কোনও খরচই কৃষককে দিতে হয় না। |
গত বছর ওই প্রকল্প অনুযায়ী এ রাজ্যে চাষ শুরু হয়। কৃষিকতার্রা জানিয়েছেন, সে বছর খরিফ মরসুমে ওই প্রকল্প রূপায়ণে সমস্যা হয়নি। সাধারণত খরিফ মরসুমে এই রাজ্যে গড়ে হেক্টর পিছু আড়াই টন চাল পাওয়া যায়। কৃষি দফতরের লক্ষ্য, সবুজ বিপ্লবের আওতাধীন জমিতে হেক্টর পিছু অন্তত তিন টন চাল ফলানো।
এ বছর কেন্দ্রীয় বাজেটে পশ্চিমবঙ্গে এই কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২৬৯ কোটি টাকা। গত বছর ওই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৭২.২০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এ বার প্রায় চার গুণ বাড়লেও ‘সবুজ বিপ্লব’ ঠিক মতো করা গেল না কেন?
এর জবাবে রাজ্য কৃষি দফতরের দুই শীর্ষকর্তা দু’রকম কথা বলেছেন। রাজ্যের কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস এই ব্যর্থতার দায় চাষিদের ঘাড়েই চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, “সব জায়গায় চাষিরা এগিয়ে আসেননি। তাঁরা নিজেদের মতো চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে জন্যই সবুজ বিপ্লবের জন্য নির্বাচিত জমির একটি অংশে ওই কর্মসূচি রূপায়িত হয়নি।” রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য অবশ্য চাষিদের ছেড়ে দোষ দিয়েছেন কেন্দ্রকেই। তিনি বলেন, “বীজ নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। আমরা জাতীয় বীজ নিগম থেকে বীজ নিয়েছিলাম। কিছু বীজের মান খারাপ ছিল। তাই, চাষিদের মধ্যে সেই বীজ আমরা বিলি করিনি। মূলত এ জন্যই ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সবুজ বিপ্লব করা যায়নি।” |
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, সবুজ বিপ্লবের জন্য জাতীয় বীজ নিগমকে প্রায় ৬০০০ টন ধান বীজের বরাত দিয়েছিল রাজ্য। তা আসার পর দেখা যায়, প্রায় ৬০০ টন বীজের মান ভাল নয়। স্বর্ণ সাব-ওয়ান জাতের ওই বীজ এসেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। কৃষি দফতরের দাবি, জাতীয় বীজ নিগমকে তা পাল্টে দিতে বলা হলেও নিগম তা দেয়নি।
কিন্তু কৃষি দফতরের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে জাতীয় বীজ নিগম। নিগমের এক কর্তা বলেন, “আমাদের ৩৫০ টন বীজ খারাপ মানের ছিল বলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে জানানো হয়েছিল। তার পুরোটাই সময়মতো পাল্টে দেওয়া হয়েছে। তাই বীজ নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে রাজ্য কেন বিকল্প বীজের ব্যবস্থা রাখেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নিগমের একাংশ। |