টোলগে ফুটছেন ওডাফা চুপচাপ র্যান্টির জেদ আকাশছোঁয়া |
দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
বাকি মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। তারপরেই আই লিগে অভিনব ম্যাচের হাতছানি কলকাতার ফুটবল রসিকদের সামনে! একই ম্যাচে ভারতীয় ফুটবলের তিন গোলমেশিন!
প্রথম জন র্যান্টি মার্টিন্স আই লিগ অভিযান শুরুই করেছেন হ্যাটট্রিক দিয়ে।
আর প্রতিদ্বন্দ্বী দলে গোলের খিদে নিয়ে বসে রয়েছেন বাকি দু’জন। ওডাফা ওকোলি ও টোলগে ওজবে।
আর দু’দলের তিন টেক্কাকে নিয়েই চড়চড় করে বাড়ছে মোহনবাগান-প্রয়াগ ইউনাইটেড ম্যাচের টিআরপি।
গত রবিবার ন্যু কাম্প স্টেডিয়ামে লা লিগায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং লিওনেল মেসির মধ্যে যে তারকাযুদ্ধ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছে গোটা বিশ্ব, বলা যেতে পারে তারই ভারতীয় সংষ্করণ শুক্রবার যুবভারতীর ম্যাচ।
ফেড কাপে ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে শহরে তোপের মুখে পড়েছিলেন দু’দলের কোচই। কী আশ্চর্য! টুর্নামেন্টে কোনও গোল ছিল না তিন গোলমেশিনের র্যান্টি, ওডাফা, টোলগে। কিন্তু আই লিগ শুরু হতেই প্রয়াগ কোচ সঞ্জয়কে ‘কমফর্ট জোন’-এ নিয়ে এসেছে র্যান্টির গোলের মধ্যে ফেরা। সেখানে মোহনবাগান কোচ সন্তোষ কিছুটা ব্যাকফুটে। শুরুতেই লাজংয়ের কাছে হেরে বসায় তাঁর চেয়ার টলমল। মুখে কুলুপ। মোহন-কোচ অবশ্য স্বস্তি পেতে পারেন টোলগের কথায়। মঙ্গলবারের পড়ন্ত বিকেলে যুবভারতীতে থেকে অনুশীলন সেরে বাড়ি ফেরার পথে সবুজ-মেরুনের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার চোয়াল শক্ত করে বললেন, “শুক্রবার জিততেই হবে। ডু অর ডাই ম্যাচ। গোল চাই। না জিতলে সমর্থকরা এ বার পিটবে।” গত দু’মরসুমে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে ৪৬ ম্যাচে ৩৫ গোল ছিল টোলগের। প্রয়াগের বিরুদ্ধে জিতে স্বস্তির অক্সিজেন পেতে তাই টোলগের দিকে অনেকটাই তাকিয়ে সবুজ-মেরুন কোচ এবং কর্তারা। |
আই লিগে তিন গোলমেশিন |
|
|
|
র্যান্টি মার্টিন্স
১৬৬ ম্যাচে ১৪৮ গোল
| ওডাফা ওকোলি
১৩৯ ম্যাচে ১৪০ গোল |
টোলগে ওজবে
৪৬ ম্যাচে ৩৫ গোল |
|
লাজংয়ের বিরুদ্ধে ৪-২-৩-১ ছকে টোলেগেকে রাইট উইংয়ে রাখায় সন্তোষের প্রতি অসন্তোষ বেড়েছিল সদস্য-সমর্থকদের। প্রয়াগের বিরুদ্ধে সেই ছক সরিয়ে ফের ৪-৪-২ ছকেই দল সাজাচ্ছেন সন্তোষ। অর্থাৎ আক্রমণভাগে সেই বহুচর্চিত ওডাফা-টোলগে জুটি। ইস্টবেঙ্গলে পেন-মেহতাবের কাছ থেকে ঠিকানা লেখা পাস আসত। কিন্তু এখানে বলের সেই জোগানটা না থাকায় ‘ওডা-টলি’ জুটি জমছে না বলে আক্ষেপ সমর্থকদের। সেই খেদ মুছতে র্যান্টিদের বিরুদ্ধে মণীশ মৈথানি-জুয়েল-ডেনসনদের সঙ্গে সাবিথকে এনে আক্রমণে বল বাড়ানোর পরিকল্পনা ভাঁজছেন মোহন কোচ।
টোলগে মরা-বাঁচার ম্যাচে গোলের জন্য যখন মরিয়া, তখন আশ্চর্যজনক ভাবে চুপ গত মরসুমে মোহনবাগানের হয়ে ২২ ম্যাচে ২৫ গোল করা ‘কিং কোবরা’ ওডাফা। বললেন, “নো কমেন্টস। ম্যাচের পর কথা বলব।” যা শুনে বহু চাপাচাপির পর সন্তোষের রক্ষণের অন্যতম সৈনিক নির্মল ছেত্রী বলছেন, “ওডাফা চুপ মানেই জানবেন ম্যাচে ঝড় উঠতে চলেছে।”
মোহনবাগান যখন থমথমে, তখন ঠিক উল্টো ছবি প্রয়াগ ইউনাইটেড শিবিরে। হ্যাটট্রিকের পর মঙ্গলবারই মোহনবাগান ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করলেন ওডাফাকে সরিয়ে গত দু’বছর আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা র্যান্টি। সেন্ট্রাল পার্কে দলের ফিজিক্যাল ট্রেনার গার্সিয়ার তত্ত্বাবধানে পাক্কা দু’ঘন্টা ঘাম ঝরানোর পর ছুটলেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুজো গাইড প্রকাশ করতে। যাওয়ার পথে প্রয়াগের হৃদপিণ্ড র্যান্টি বললেন, “এটা কি টেবল টেনিস না ক্যারম? আমার গোল করা বা জেতা নির্ভর করবে গোটা দলের ওপর। মনে রাখবেন, লড়াইটা কিন্তু এগারো বনাম এগারো।”
গোয়ায় থাকার সময় এ রকম হাইভোল্টেজ ম্যাচে বিবৃতির বন্যা বয়ে যেত র্যান্টির মুখে। ২০০৪ থেকে অনেক বারই বলে-বলে মোহনবাগানের জালে বল জড়িয়েছেন। শুক্রবার কি ওডাফার সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই? জানতে চাইতেই এই প্রথম কলকাতার টিমের জার্সি গায়ে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে লড়তে নামা র্যান্টির আগের মতোই মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে সোজাসাপটা জবাব, “ওডাফা বড় ফুটবলার। কোনও লড়াই নেই। তবে তিন পয়েন্ট চাই। জিততেই হবে।”
মোহনবাগানে কর্তাদের নির্দেশে সবাই যখন চুপ তখন প্রয়াগে সেই বিধিনিষেধ নেই। সংগ্রাম বলছেন, “ওডাফার সঙ্গে খেলেছি। টোলেগেকেও জানি। কিন্তু র্যান্টির জেদ আকাশছোঁয়া। মনে হয় এই জেদটাই আমাদের জেতাবে।”
শুক্রবার তিন গোলমেশিনের কে যুবভারতীতে জ্বলে উঠে তিন পয়েন্ট পকেটে পুরে ‘সিকন্দর’ হয়ে মাঠ ছাড়বেন তা জানতেই এখন অপেক্ষা ফুটবলপ্রেমীদের।
|
তথ্য হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় |