রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গড়াপেটা বিতর্কের নিষ্পত্তি ঘটাতে নেমে পড়ল আইসিসি। একটি টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার এই তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা।
সোমবার রাতে একটি ভারতীয় টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে গড়াপেটার অভিযোগ ওঠে ছ’জন আম্পায়ারের বিরুদ্ধে। তাঁদের কেউ পাকিস্তানি, কেউ বাংলাদেশের, কেউ শ্রীলঙ্কার। গড়াপেটা নিয়ে এই নতুন কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলের কাছ থেকে যাবতীয় প্রমাণ চেয়ে পাঠায় আইসিসি। সেই ভিত্তিতে মঙ্গলবার তদন্ত শুরুর ঘোষণা করা হল। আইসিসি-র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যে কোনও ধরনের দুর্নীতি, তা সেই ক্রিকেটারই করুক বা ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যরা, আইসিসি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না।” তবে সংস্থার পক্ষে জানানো হয়েছে, স্টিং অপারেশনে ধরা পড়া ছয় আম্পায়ারের কেউই সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দায়িত্বে ছিলেন না। অভিযুক্ত আম্পায়ারদের কেউ কেউ আবার প্রবল ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। বাংলাদেশের নাদির শাহ যেমন বলেছেন, “যদি গড়াপেটা করতামই, তা হলে আইসিসি ঠিকই আমাকে ধরে ফেলত।’’ পাকিস্তানের আম্পায়ার নাদিম ঘাউড়ির আবার মন্তব্য, “এই সব মাথামুণ্ডুহীন অভিযোগ উঠতে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।”
আম্পায়াররা যা-ই বলুন, আইসিসি-র পাশাপাশি এ দিন আলাদা আলাদা করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডও। আইসিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই তদন্ত চালানো হচ্ছে। আর ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ব্যাপারে তাদের কিছু করণীয় থাকলে অবশ্যই সেটা করা হবে। বোর্ডের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্ল এ দিন বলেছেন, “যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেটা আইসিসি-কেই নিতে হবে। অভিযুক্ত আম্পায়াররা আদৌ দোষী কি না, সেটা যাচাই করে দেখতে হবে আইসিসি-কে।” সঙ্গে আরও যোগ করেছেন, “আমরা খেলাটাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই। যখনই এ রকম কোনও ঘটনা ভারতীয় বোর্ডের বিচারাধীন হয়, তখন আমরা কড়া পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রেও যদি আমাদের কিছু করণীয় থাকে, তা হলে আমরা নিশ্চয়ই সেটা করব।”
ভারতীয় বোর্ড বল পুরোপুরি ঠেলছে আইসিসি-র কোর্টে। তবে আইসিসি এবং বোর্ডের পক্ষ থেকে ভারতীয় আম্পায়ারদের বলে দেওয়া হয়েছে, এ ব্যাপারে মুখ না খুলতে। আইসিসি-র প্যানেলে থাকা ভারতীয় আম্পায়ার এ ভি জয়প্রকাশকে এ দিন ফোনে ধরা হলে তিনি বললেন, “মুখ তো খোলা উচিত এ ব্যাপারে। যা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে একজন আম্পায়ার হিসেবে মতামত জানানো আমার কর্তব্য। কিন্তু আইসিসি-র পক্ষ থেকে আমাকে বলে দেওয়া হয়েছে স্টিং অপারেশন নিয়ে একটা কথাও না বলতে। যা বলার নাকি আইসিসি বলবে।” ভারতের আর এক আম্পায়ার এস কে বনসলও ফোনে বললেন, “আমি বোর্ডের চুক্তিতে আছি। এ ব্যাপারে যা বলার বোর্ড বলবে। আমি বলার কে?”
গোটা ঘটনায় আবার নতুন মশলা যোগ করেছেন প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার ডারেল হেয়ার। গড়াপেটার কাহিনিতে জড়িয়ে ফেললেন আইপিএলকেও। আইসিসি-র তদন্তের খবর শুনে বিতর্কিত আম্পায়ারের মন্তব্য, পুরো ঘটনাপ্রবাহে মোটেই তিনি আশ্চর্য নন। বরং গড়াপেটায় আম্পায়ারদের জড়িয়ে পড়ার খবর তিনি আইপিএলের জন্ম থেকেই শুনছেন! “অনেক দিন ধরেই তো এ সব শুনছি। আইপিএল শুরুর সময় থেকেই কানে আসছিল যে, এই নোংরা ব্যাপারে আম্পায়াররাও জড়িয়ে,” মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার একটি কাগজকে বলেছেন হেয়ার। এখানেই না থেমে আরও বলেছেন, “একটা জিনিসই শুধু দেখার ছিল। কত দিন লাগে ব্যাপারটা ফাঁস হতে।” হেয়ারের সঙ্গে একমত নন আইপিএল ফাইভে চারটে ম্যাচ খেলানো বাংলা তথা বোর্ডের আম্পায়ার প্রেমদীপ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন বলে দিলেন, “ডারেল হেয়ার যা বলছেন সেটা ঠিক নয়। আইপিএলে এ জিনিস হয় না। প্রত্যেকটা ম্যাচের আগে আমাদের মোবাইল জমা দিতে হয়। এমনকী যে হোটেলে থাকি, সেখানে কোনও অতিথি এলেও তাঁর জন্য বিশেষ অনুমতির ব্যবস্থা আমাকে করতে হত।” |