মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ম্যাচে উমর গুলের বোলিং ও শিয়ালকোটের ব্যাটিং দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, এই উইকেটে পেসারদের কী ভাবে সামলাবে ব্যাটসম্যানরা, এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। গুল যেভাবে প্রায়ই ব্যাটসম্যানদের চোখ-নাকের উচ্চতায় বল তুলে দিচ্ছিল, তাতে এই প্রশ্নটা মনে আসাই স্বাভাবিক। দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্স ও গতিতে ভরা উইকেট এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা কী ভাবে মানিয়ে নিতে পারবে, পরের প্রশ্ন হচ্ছে সেটা।
সোজা কথাটা সোজা করে বলাই ভাল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে কেকেআর-কে কিন্তু অন্য লড়াই লড়তে হবে। এই লড়াইটা আইপিএলের চেয়ে অনেক আলাদা। আইপিএলে ঘরের মাঠে, চেনা পরিবেশে ও চেনা উইকেট খেলতে হয়েছিল গৌতম গম্ভীরদের। এখানে কিন্তু সম্পুর্ণ উল্টো পরিবেশ। এখানে আবহাওয়াও যেমন অচেনা, উইকেটও তেমনই। ভারতীয় দল বিদেশ সফরে গেলে যেমনটা হয়, এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সে রকমই। এই সময়টাতেই দক্ষিণ আফ্রিকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল আমার। তাই জানি, কী ধরনের পরিবেশ অপেক্ষা করে আছে গম্ভীরদের জন্য।
অবশ্য আইপিএলের সব কটা দলকেই এই অসুবিধা ভোগ করতে হবে, কিন্তু ওরা তো আর কেউ আইপিএল চ্যাম্পিয়ন নয়। নাইটদের কাছে তাই প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি। সেজন্যই ওদের পরীক্ষাটা একটু বেশি কঠিন।
উইকেটের বাউন্স ও গতির কথা তো আগেই বললাম, তার উপর আর একটা তথ্য আপনাদের দিয়ে রাখা দরকার, দক্ষিণ আফ্রিকায় মরসুম এখনও শুরু হয়নি। এই সিএল টি টোয়েন্টি দিয়েই শুরু হচ্ছে। ফলে উইকেট একেবারে তাজা ও প্রাণবন্ত থাকবে। বুঝতেই পারছেন, এমন উইকেটে পেস বোলাররা রীতিমতো পিকনিকের মুডে থাকবে। ব্যাটসম্যানদের জীবন বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। তাই যদি ভেবে থাকেন এখানে সব ম্যাচেই রানের ফোয়ারা ছুটবে, তা হলে কিন্তু ভুল করছেন।
এই ধরনের পরিবেশে, উইকেটে যারা বেশি খেলতে অভ্যস্ত, সেই অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররাই এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মাতিয়ে দেবে। ওরাই বেশিরভাগ ম্যাচে তফাত গড়ে দিতে পারে। নাইটদের বাজি হতে পারে জাক কালিস, ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, ব্রেট লি-রা।
ভারতের উইকেটে শট বাছাই আর দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে শট বাছাইয়ের মধ্যে বেশ ফারাক আছে। এটা নাইটদের শিবিরের ব্যাটসম্যানদের সবার আগে বুঝতে হবে। এখানে ফ্রন্টফুটে গিয়ে চার-ছয় হাঁকানোর সুযোগ কিন্তু বেশ কম। উইকেটের যা গতি, তাতে যারা ব্যাকফুটে গিয়ে কাট, পুল করতে ওস্তাদ, তাদেরই সুবিধা হবে। মনে পড়ছে, গত আইপিএলে ইডেনে ডি লানজের একটা বল ইরফান পাঠান বেশ আরামে শর্ট আর্ম পুল করে বাউন্ডারি মারে। এ রকম শট কিন্তু ওখানে খেলা অত সোজা হবে না। বলের লেংথ ঠিক মতো মেপে নিয়ে ব্যাট করাটাই এখানে আসল কাজ। মনোজ তিওয়ারি অবশ্য এ রকমই ব্যাটসম্যান। কাট-পুল ও ভাল করে। তাই ওর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মানসিক বোঝাপড়াটা ঠিকঠাক করতে হবে। সেটা ঠিকমতো করে নিতে পারলে ওর সফল হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
যদিও কাজটা খুব একটা সোজা হবে না। সদ্য শ্রীলঙ্কায় টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে সবাই। ওখান থেকে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো কঠিন কাজ আর কিছু আছে না কি? এটা যারা করতে পারবে, তারাই সিএল টি টোয়েন্টিতে শেষ হাসি হাসবে।
আইপিএলে যে কেকেআরের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল, সেই সুনীল নারিন এই টুর্নামেন্টেও গুরুত্বপূর্ণ হবে। নারিন ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার সঙ্গে সে ভাবে মানিয়ে নিতে পারেনি। এখানে কী করে, সেটাই দেখার। আমার মতে, নাইটদের বিদেশিদের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হবে এবং এই চার বিদেশি হওয়া উচিত ম্যাকালাম, কালিস, দুশখাতে ও নারিন। ভারতীয় পেসাররা আশা করি এই উইকেটে ভালই পারফরম্যান্স করবে।
|