|
|
|
|
বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ |
দীর্ঘ সংগ্রামেরই সাফল্য দেখছেন জুয়েল ও দিলীপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর |
‘১৮ বছরের সংগ্রামের সফল অবসান হল’। প্রতিক্রিয়া ডিমা হালাম দাওগার প্রধান দিলীপ নুনিসার। জুয়েল গারলোসারও একই অভিমত। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে এক সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি মেনে নিয়ে জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন দুই জঙ্গি নেতা। ক’দিন পরই অবশ্য বিচ্ছেদ ঘটে তাঁদের। জুয়েল ফের অস্ত্র হাতে তুলে নেন। গড়ে তোলেন ডিএইচডি (জুয়েল) গোষ্ঠী। সে থেকেই আলোচনাপন্থীদের পরিচিতি দিলীপ গোষ্ঠী হিসেবে।
দু’জনেই গত কাল এক সঙ্গে স্বাক্ষর করলেন ‘মেমোরান্ডাম অফ সেটেলমেন্ট’-এ। অন্য পক্ষে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে সই করেছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্মসচিব (উত্তর-পূর্ব) শম্ভু সিংহ। রাজ্য সরকারের পক্ষে প্রধান সচিব শৈলেশ। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে ও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বিশেষ মুহূর্তটির সাক্ষী হয়ে রইলেন।
এই চুক্তিতে ডিমা হাসাও স্বশাসিত পরিষদকে ডিমা হাসাও আঞ্চলিক পরিষদে উন্নীত করা হয়েছে। পৃথক রাজ্যের দাবিতে ডিএইচডি-র জন্ম হলেও দিন যত গড়িয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে বোঝাবুঝিতে সে থেকে সরে আসেন দিলীপ নুনিসারা। নতুন শর্ত জোড়েন, কাছাড় ও নগাঁও জেলার ৯৪টি গ্রামকে আঞ্চলিক পর্ষদে অন্তর্ভুক্তির। শেষ পর্যন্ত একে অবশ্য ডিমা হাসাও জেলাতেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। তবে অন্য জেলায় বসবাসকারী ডিমাসা জনগোষ্ঠীর মানুষের সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশের জন্য রাজ্য সরকার পৃথক কাউন্সিল গঠন করবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয় এ দিন। একই ভাবে ডিমা হাসাও টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলে যেন অন্যান্য উপজাতি এবং অ-উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষ নিরাপদে বসবাস করেন, এরও গ্যারান্টি দেন দিলীপ জুয়েল। সেই সঙ্গে নিজেদের জঙ্গি সংগঠনগুলি ভেঙে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তাঁরা। এ জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে তাঁদের। যেমনটা আঞ্চলিক পর্ষদের নিজস্ব চেহারা পেতে সময়ের দরকার।
কেন্দ্র নবগঠিত ডিমা হাসাও আঞ্চলিক পর্ষদকে তাদের নিয়মিত বরাদ্দের বাইরে দু’শো কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ প্রদানের কথাও ঘোষণা করেছে। ওই টাকা ৪০ কোটি করে পাঁচ বছরে দেওয়া হবে।
এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে ডিমা হাসাও জেলায় ক’দিন ধরেই হিংসাত্মক নানা ঘটনা ঘটে চলেছে। অ-ডিমাসা উপজাতিদের লাগাতার বন্ধ, যাত্রিবাহী ট্রেনে গুলি, বিস্ফোরণ, ভাঙচুরের পর উত্তেজনা দমনে কার্ফু জারি হয়। কাল কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও চুক্তি স্বাক্ষরের পর কার্ফুর মধ্যেই বাজি-পটকার আওয়াজ শোনা যায় ঘন ঘন। দক্ষিণ অসম রেঞ্জের ডিআইজি বিনোদ কুমার জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে বলে মনে হলেই কার্ফু তোলা হবে।
এ দিকে চুক্তি স্বাক্ষর করে দিলীপ নুনিসা জানান, এ বার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে। দিল্লি থেকে সরাসরি অর্থ আসবে। পর্ষদই বাজেট তৈরি করবে, বাস্তবায়ন করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দে বলেন, নিজেদের দাবি আদায়ে আলোচনার বিকল্প নেই। ছোট্ট একটি জেলার ক’জন জঙ্গির সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে কেন্দ্র অন্যদের এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছে। তিনি অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকেও অস্ত্র সমর্পণ করে শান্তির রাস্তায় পা রাখতে আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ডিমাসা নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন, সকল জনগোষ্ঠীর মানুষকে নিয়ে মিলেমিশে চললেই অঞ্চলের উন্নতি হতে পারে। বিশেষ আর্থিক প্যাকেজে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে বলেই তিনি আশা ব্যক্ত করেন। |
|
|
|
|
|