|
|
|
|
...গন্ধ এসেছে: পটনাই পুজো |
 |
স্বদেশিদের রক্ষা করতেই
শুরু বাঙালি আখড়ার পুজো
স্বপন সরকার • পটনা |
|
এক সময়ে ইংরেজদের চোখে ধুলো দিতেই শুরু হয়েছিল এই পুজোর। ১৮৯৩ সালে সূচনা হয় বাঙালি আখড়ার এই পুজোর। পটনায় বাঙালীর সংখ্যা কমে গেলেও বাঙালি আখড়া কিন্তু এখনও সংস্কৃতি আর পুজোকে নিয়েই বেঁচে আছে। দুর্গা, কালী, বাসন্তী, শিব এবং গনেশের পুজো নিয়ে দিব্যি মেতে আছে এখানকার বাঙালি সমাজ।
কিন্তু বাঙালি আখড়া নামকরণের মাহাত্ম্যটি কী?
ইস্ট ইন্ডিয়া শাসনের সময়েই পটনা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বাঙালিরা ঘাঁটি গেড়েছিল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে সংগঠনের প্রয়োজন ছিল তা গড়ে উঠেছিল এই পটনাতেও। স্বাধীনতা আন্দোলনের লড়াইয়ে সারা বাংলা জুড়ে যখন লড়াই শুরু হয়, তখন এই পটনাতেও তার ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে। সেই লক্ষ্যেই ১৮৭৪ সালে সুরোদ্যান অ্যাথলেটিকস ক্লাব তৈরি হয়েছিল। যেখানে শরীর চর্চা চলত নিয়মিত। ক্রমশ এই সুরোদ্যানই লোকমুখে বাঙালি আখাড়া নামে পরিচিত হয়। এর পরে ইংরেজের চোখে ধুলো দিতে ১৮৯৩ সালে
শুরু হয় দুর্গা পুজো। কারণ, সাধারণ ভাবে ইংরেজরা ধর্মীয় কোনও স্থানে চট করে হানা দিত না। আর সেই সুযোগে, পুজোর পিছনে আসলে থাকত ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের কৌশল রচনা।
স্বাধীনতার পরে এই আখড়ার প্রয়োজন কমে আসে। পুজো কিন্তু বন্ধ হয়নি। বরং তা বেড়েছে। এবার ১২০ বছরে পড়ল বাঙালি আখড়ার পুজো। আখড়ার পরিধি ছোট হয়ে এলেও পুজো আর সংস্কৃতি চর্চা কিন্তু বেড়েই চলেছে। দুর্গা পুজোর পরে কালী পুজো। এর সঙ্গে শুরু হয় নববর্ষে বাঙালি বাসিন্দাদের নিয়ে গান, কবিতা আর ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা। ১৯৯৪ সালে শুরু হয় বাসন্তী পুজো। এরপরে গত বছর থেকে গনেশ পুজোও চলছে এই আখড়ায়। এত দিনের দুর্গাপুজোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গত বছর উদ্বোধন হয়েছে দুর্গা মন্দিরের। সেখানে আছে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি। এক চালায় তৈরি মূর্তি দিয়ে প্রতি বছর কঠোর নিয়মের মধ্যে দুর্গা পুজো করা হয়।
দুর্গাপুজোয় এই বাঙালি
আখড়া হয়ে ওঠে বাঙালিদের মেলবন্ধনের জায়গা। পুজোর ক’দিন পটনার বাঙালিরা আড্ডায় মেতে ওঠেন। সেই আড্ডায় ওই ক’টা দিন চিরাচরিত তর্কবিতর্কও জমে ওঠে বাঙালিদের মধ্যে।
অমিত সিংহ সেই ২০০৫ সাল থেকে সম্পাদক পদে। তিনি বললেন, “পুজোটা আমরা নিয়ম মেনেই করি। পুজো নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সেই সময় কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারি না। বাংলা নববর্ষে সেই অনুষ্ঠান করি।” অমিতবাবুর কথায়, “বাঙালি যেখানেই থাকুক, আড্ডা তো থাকবেই। তাই সারা দিন ধরে পুজো মণ্ডপের সামনে চলে আড্ডা আর চায়ের পেয়ালায় তুফান। তাতেই মাতোয়ারা আমরা।” আখড়ার সেই মেজাজ আজ নেই, তবে বাঙালির আসল মেজাজটা এখনও রয়ে গিয়েছে এখানে। আর তাতেই খুশি পটনার এই বাঙালি সমাজ। |
|
|
 |
|
|