চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের মোড়ে বাস থেকে নেমেই পা হড়কে পড়ে গেলেন বছর পঁচিশের পায়েল মজুমদার। রাস্তার গর্তে এমনই চোট পেলেন যে, চোখ থেকে জল বেরিয়ে এল তাঁর। পিছনে তখন কোনও বাস ছিল না। এ যাত্রা তাই প্রাণে বেঁচে গেলেন ওই তরুণী।
পুজোর আগে শহরের বেহাল রাস্তায় আকছারই ঘটছে এ রকম। আপাতদৃষ্টিতে রাস্তার হাল ভাল মনে হলেও কিছু কিছু জায়গার খানাখন্দের অবস্থা ভয়ঙ্কর। ওই এলাকার বাসিন্দা সুতপা বিশ্বাসের কথায়, “পুরো রাস্তাটা খারাপ হলে সাবধান হওয়া যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে এ রকম অবস্থা হয়ে থাকলে তো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যখন-তখন।” পুজোর আগে রাস্তাগুলি সারিয়ে দিতে সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন তিনি। |
শিয়ালদহ উড়ালপুলের উপরে ট্রামরাস্তার অনেক জায়গায় ভাঙাচোরা। গর্তে পড়ে আচমকা পাল্টে যাচ্ছে ছুটন্ত গাড়ির গতি। একই হাল রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডেও। অথচ, সেখানে এখনও মেরামতির কাজ শুরুই হয়নি। অটো, ট্যাক্সি-সহ সব যানবাহনই চলছে খানাখন্দ বাঁচিয়ে। খোদ কলকাতা পুলিশের মতে, রাস্তাগুলির হাল এতই খারাপ যে, প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
ফি-বছর পুজোর আগে শহরের রাস্তা সারাতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। পুজোর ক’দিন শহরের পথে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় সামলাতে হয় পুলিশকে। তাই পুলিশই শহরের ভাঙাচোরা রাস্তাগুলি সারিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য ও পুর-প্রশাসনকে একটি তালিকা করে দেয়। এ বারও নিয়মমাফিক সেই তালিকা পৌঁছে গিয়েছে সরকারের হাতে।
তালিকা অনুযায়ী দক্ষিণ কলকাতার চেয়ে উত্তর কলকাতার রাস্তার অবস্থা বেশি শোচনীয়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ছাড়াও উত্তর ও মধ্য কলকাতার রামমোহন সরণি, এপিসি রোড, সূযর্র্ সেন স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোড, রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিট-সহ আরও কিছু রাস্তা নিয়ে চিন্তিত পুলিশ। বিশেষত, কাশীপুর ও রাজা মণীন্দ্র রোডের হাল যে খুবই খারাপ, তা ওই তালিকায় উল্লেখও করে দিয়েছে পুলিশ। উত্তর কলকাতার ট্রামরাস্তার হালও তথৈবচ। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটও বেহাল বলে জানানো হয়েছে তালিকায়। |
তবে পুলিশ যে তালিকাই দিক না কেন, তার সবটুকু মেনে কাজ করতে নারাজ পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরসভার রাস্তা দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “এমনিতেই অনেক দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় পুলিশের তালিকা মেনে কাজ করতে হলে পুজো কাবার হয়ে যাবে।”
সমস্যা মেটাতে তা হলে কী করছে পুরসভা? ওই অফিসার জানান, রাস্তা সংস্কার নিয়ে মহাকরণে পুরমন্ত্রীর ঘরে বৈঠক হয়েছে। ছিলেন পুরসভা, পূর্ত ও কেএমডিএ-র কর্তারা। সেখানে আর একটি তালিকা তৈরি হয়, যা মেনে রাস্তা সারাই হবে বলে ঠিক হয়। কাজ শেষ করতে বলা হয় ১০ অক্টোবরের মধ্যে। এখনও উত্তর কলকাতার রামমোহন সরণিতে হাতই পড়েনি। একই হাল রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের। কাজ বাকি শিয়ালদহেও।
পুরসভার রাস্তা দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “মোট ১৩০টি রাস্তায় কাজ করার কথা। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশের তালিকা মতো কিছু রাস্তার পুরো কাজ করা দূর অস্ৎ, গর্ত বোজানোর কাজই শেষ হয়নি।” দু’দিনে সব কাজ করা যে সম্ভব নয়, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন ওই অফিসার। তবে পুরকর্তারা যা-ই বলুন না কেন, রাস্তা সারাই নিয়ে নিশ্চিন্ত মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “যে সব রাস্তা সারাই করার কথা ছিল, তা হয়ে গিয়েছে।” অন্য দিকে, কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপকুমার আদক বলেন, “১০ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা আছে। তবে এখনও কোথাও কোথাও কাজ হচ্ছে।” |