পুর-সমাবেশ
পুলিশের সৌজন্যে নায়ক, ফসল তুলল বামফ্রন্ট
প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার ষোল আনা ফায়দা তুলল বামফ্রন্ট! পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই কলকাতা পুরসভার সামনে সমাবেশ করে ‘নায়ক’ হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলেন বিরোধী শিবিরের নেতারা! প্রথম দিকে বাধা দিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছু হঠল পুলিশ। গোটা ঘটনাকে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল বাড়ানোর জন্য কাজে লাগাতে পারল বামফ্রন্ট!
পুর-সমাবেশের জন্য এক মাস আগে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট লালবাজারে চিঠি পাঠালেও পুলিশ-কর্তারা আমল দেননি। সমাবেশের তিন দিন আগে তাঁরা বাম নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, অনুমতি দেওয়া যাবে না। সিপিএমের তরফে এর পরে পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কোনও সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত বামেরা ঘোষণা করে, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই সমাবেশ হবে। পুলিশ-কর্তারা বাম নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে অনায়াসে যে সংঘাত এড়াতে পারতেন, সেই পথে তাঁদের না-যাওয়াই অস্ত্র তুলে দিল বিরোধীদের হাতে! সুকৌশলে তারা পুলিশের আচরণকেই রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করল কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করার কাজে। পুরসভা চত্বরে ছোট ম্যাটাডোরে মঞ্চ বেঁধে মাইক হাতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র হুঁশিয়ারি দিয়ে গেলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। ভাল জমায়েত থেকে প্রবল হাততালিও জুটল!
পুরসভার সামনে বামেদের সমাবেশ। মঙ্গলবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
বস্তুত, পুর-সমাবেশ সামলাতে পুলিশের ব্যর্থতাই যে তাঁদের মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছে, ঘরোয়া আলোচনায় তা অস্বীকার করছেন না সিপিএম নেতারা। তাঁদের মতে, প্রশাসন আলোচনা না-করে প্রথমেই চোখ রাঙাতে গেলে বিরোধীরা পাল্টা চ্যালেঞ্জ নেবেই। গত সপ্তাহে কলকাতায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সমাবেশ নিয়ে পুলিশি বাধার ফলেই পরে সেই জমায়েতে প্রতিবাদী চেহারা আনা গিয়েছিল, এ দিনও তার পুনরাবৃত্তি হল। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “পুরসভা চত্বরে এ দিন সকালে আমাদের পতাকা লাগানোর চেষ্টায় পুলিশ বাধা দিয়েছিল। আমরা স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সরব হয়েছিলাম। প্রচার হয়ে গিয়েছিল। দুপুরের পরে লালবাজার থেকে ফোন করে জানতে চাওয়া হল, আমরা কী চাই? আমরা বললাম, পুরসভা ঘেরাও করার কোনও পরিকল্পনা আমাদের নেই। চ্যাপলিনের উল্টো দিকে একটা নামী রেস্তোরাঁর সামনে সমাবেশ করব। ওঁরা এর পরে আর আপত্তি করেননি।” এর ফলে যা দাঁড়াল পুলিশের আপত্তি বাস্তবে টিকলও না, আবার বামফ্রন্ট পুলিশি বাধা জয় করে সমাবেশ করার মর্যাদা ঘরে তুলে নিয়ে গেল!
ভিড় দেখে উৎসাহিত বিরোধী দলনেতা স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন বলেছেন, “এই সভা নিয়ে এত ঘোষণা করার কী দরকার ছিল? করতে দেব না বলে এত হইচই আপনারা করলেন কেন? এই তো মঞ্চ হয়েছে, এই তো মাইক নিয়েই আমরা সভা করছি!” নভেম্বর বিপ্লব স্মরণে আগামী ৭ নভেম্বর ধর্মতলায় লেনিন মূর্তি-চত্বরে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হওয়া যাবে না বলে সোমবারই সিপিআইয়ের একটি সংগঠনকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। পুর-সমাবেশের পরে এ বার সেই ঘটনাকেও দলকে চাঙ্গা রাখতে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন বাম নেতৃত্ব। সূর্যবাবু যেমন এ দিনই বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দৌড় তো দেখা যাচ্ছে! ওঁকে বলছি, আজকের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিন। ওই চিঠি ফিরিয়ে নিন। আমরা চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছি! এর পরেও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ৭ তারিখ দেখা হবে!”
ত্রিফলা-কাণ্ডের দুর্নীতি, ডেঙ্গি মোকাবিলায় তৃণমূল-পরিচালিত পুরবোর্ডের ব্যর্থতা, বস্তি উন্নয়ন এবং নানা জরুরি পরিষেবায় অবহেলার বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত ভাবেই সরব হয়েছেন পুরসভার বিরোধী নেত্রী রূপা বাগচি-সহ বাম নেতৃত্ব। সূর্যবাবু অভিযোগ করেছেন, শহর জুড়ে একই জায়গায় বারবার নীল-সাদা রং লাগানোর বরাত পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়েরাও। তাঁর কথায়, “আমরা বলছি, আপনার বাড়ির লোক যুক্ত। কেন বলতে পারছেন না, কেউ জড়িত নন? কেন বলতে পারছেন না, পুরসভা ঠিক কাজ করছে? মেয়র ঠিক কাজ করছেন?” ত্রিফলা-দুর্নীতি নিয়ে এ দিন মেয়রের ঘরের সামনে বিক্ষোভও দেখান বাম কাউন্সিলরেরা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য অবিচলিত ভাবেই বলেছেন, “ত্রিফলা আলো নিয়ে কোনও অনিয়ম হয়নি। ওটা এখন ক্লোজড্ চ্যাপ্টার! আলো লাগানোর বরাতে সব কিছু নিয়ম মেনে হয়েছে।” তা হলে পুর কমিশনার ওই সংক্রান্ত বিল আটকে দিয়েছিলেন কেন? মেয়র বলেন, “কমিশনার বিল আটকে দিয়েছেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই।” যদিও মেয়র পরিষদের বৈঠকেই কমিশনারের ওই নোট সংক্রান্ত রিপোর্ট সদস্যদের দেওয়া হয়েছিল। কেনই বা ডিজি (আলো)-কে সরিয়ে দেওয়া হল? মেয়রের জবাব, “তার বহু কারণ আছে। শুধু ত্রিফলা নয়।” তিনি এ দিন ফের জানিয়ে দেন, ত্রিফলা-বিলের ৭৫% টাকা খুব শীঘ্রই দেওয়া হবে। বামেদের প্রতি মেয়রের পাল্টা কটাক্ষ, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ওরা চিৎকার করছে! বাস্তবের সঙ্গে ওদের অভিযোগের মিল নেই।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.