চোখের সামনে মায়ের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা লুঠ করে নিয়েছিল ট্যাক্সিচালক। স্বাভাবিক ভাবেই ভয় পেয়ে গিয়েছিল এগারো বছরের ঋষভ। কিন্তু ওই অবস্থাতেও সে তার উপস্থিত-বুদ্ধি হারায়নি। ট্যাক্সির নম্বরের শেষ চারটি অঙ্ক মনে করে রেখেছিল। ওই সূত্র ধরেই টাকা লুঠের ঘটনায় দুই অভিযুক্তের এক জনকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ধৃতের নাম মহম্মদ সরফরাজ (২৭)। বাড়ি তপসিয়ায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ঘটনার সময় ট্যাক্সির স্টিয়ারিং ছিল সরফরাজের পরিচিত এক যুবকের হাতে। আলপনা পালের কাছ থেকে লুঠ করা দেড় হাজার টাকার মধ্যে মাত্র দেড়শো টাকা সরফরাজকে দিয়ে বাকি টাকা ওই যুবকই আত্মসাৎ করে বলে সরফরাজ দাবি করেছে। কিন্তু ওই যুবকের বাড়ি কোথায়, সে জানে না। সরফরাজের বক্তব্য, সে দিন সায়েন্স সিটি-র কাছে ওই যুবককে সে গাড়িতে তুলেছিল। যুবকও ট্যাক্সিচালক। সে বলেছিল, ট্যাক্সি চালাবে। সেই মতো তার হাতে স্টিয়ারিং দিয়ে নিজে তখন সহকারীর ভূমিকায় ছিল সরফরাজ। |
রবিবার সন্ধ্যায় এগারো বছরের ঋষভ আর নয় বছরের রোহনকে নিয়ে সায়েন্স সিটি থেকে ট্যাক্সিতে বেহালায় বাড়ি ফিরছিলেন আলপনাদেবী। বোসপুকুরের কাছে ট্যাক্সি থামিয়ে চালক ও হেল্পার তাঁর কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরে তারাতলা মোড়ের পুলিশ-সহায়তা কেন্দ্র ও বেহালা চৌরাস্তার ট্র্যাফিক গার্ড-এ গিয়েও সাহায্য পাননি আলপনা। অথচ ঋষভ কিন্তু তখনই নম্বরপ্লেটের শেষ চারটি অঙ্ক মনে করে বলতে পেরেছিল। গোটা ঘটনায় আগাগোড়া বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে সে। ট্যাক্সি খারাপের অজুহাত দেখিয়ে নামিয়ে দেওয়ার পরে আলপনা প্রথমে পাঁচশো টাকার নোট দিলে চালকের সহকারী দাবি করে, ওটা পঞ্চাশ টাকার নোট। ঋষভই মাকে বলে, নোটটা সহকারী সিটের উপর ফেলে দিয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশ আলপনাদের জানিয়েছিল, শুধু ওই চারটি নম্বর দিয়ে ট্যাক্সিটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। মঙ্গলবার গোটা দিনটা কিন্তু ওই চারটি নম্বরের সাহায্যেই ট্যাক্সিটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে পুলিশ। এবং এ সব ক্ষেত্রে সেটাই চলতি পদ্ধতি বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারাই। পুলিশের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অনিল জানার বক্তব্য, মোটরযান দফতর এবং কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কম্পিউটার সেল-এ শহরের সব গাড়িরই তথ্য থাকে। কোনও গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের শেষ চারটি নম্বর দফতরের কম্পিউটারে ‘লোড’ করলে ওই একই নম্বরে রেজিস্ট্রেশন হওয়া বিভিন্ন সিরিজের গাড়ি সম্পর্কে তথ্য মেলে।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই পুলিশ এ দিন মোট ১৩টি ট্যাক্সিকে চিহ্নিত করে। তার আগে এ দিন দুপুরে ফোনে আলপনার কাছ থেকে ট্যাক্সি চালক ও হেল্পারের চেহারার বিবরণ জেনে নেয় পুলিশ। উপস্থিত ১৩ জন ট্যাক্সিচালকের মধ্যে সরফরাজের আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক ছিল। তাকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই এক অফিসার বলেন, সব তথ্য পুলিশ ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছে। তাই কিছু লুকিয়ে লাভ হবে না। সেই ওষুধে কাজ হয়। ভেঙে পড়ে সরফরাজ। তাকে গ্রেফতারের পরে কসবা থানা থেকে পুলিশ আলপনাদেবীর বাড়িতে যায় তাঁর লিখিত অভিযোগ নিতে। যে জায়গায় তাঁর কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা লুঠ করা হয়েছিল, সেটি কসবা থানার এক্তিয়ারে পড়ে।‘পুলিশ কাকু’দের দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঋষভ বলে, “এ বার থেকে ট্যাক্সির নম্বর ভাল করে দেখব। ট্যাক্সিচালকের চেহারা মনে রাখার চেষ্টা করব। স্কুলের বন্ধুদেরও বলব।” |