যিনি রাঁধেন, তিনি ঠাকুরও দেখেন। বা উল্টোটা।
পুজোর দিনগুলো সকলকেই যে রান্নাবান্নার পাট তুলে রেস্তোরাঁমুখো হতে হবে তার যেমন মানে নেই, আবার থোড়-বড়ি খাড়া করে যেতে তেমনও কোনও কথা নেই। বরং হাতের গুণে থোড় হয়ে উঠতে পারে পোলাও বা মহিষাসুরের মতো রূপ বদলে পিঁয়াজ ধরতে পারে প্রায় মোমোর চেহারা।
মোদ্দা কথা, এমন কিছু চাই যা কড়ি ফেললেও বাজারে মেলে না। আবার, পাতে সাজিয়ে দিলে খাইয়েরা নাক সিঁটকে কড়িকাঠ গুনতেও শুরু করবে না। কাটোয়ার কয়েক জন গিন্নি দেখালেন এমনই হাতযশ। |
বাঁধাকপি পাতায় মৌরলা মাছ |
|
|
অর্পিতা দাস |
বিবেকানন্দ পল্লির বধূ অর্পিতা দাস গণিতে স্নাতক। এ বছর এমএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। দিন কয়েক আগে গিয়েছিলেন এক বন্ধুর বাড়িতে। তাঁর মায়ের কাছেই জানতে পারেন, মৌরলা মাছ দিয়ে সর্ষে বাটার ঝাল ছাড়াও অন্য কিছু করা যায়। কেমন সেই রান্না?
প্রথমে মৌরলা মাছ জলে ধুয়ে নিতে হবে। তার পরে পরিমাণ মতো নুন-হলুদ, সর্ষের তেল, নারকেল কোরা মাখিয়ে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। বাঁধাকপির ভিতরের দিকের পাতা ছাড়িয়ে নিয়ে ভাল করে ধুতে হবে। মাছগুলোর সাইজ এক থাকা জরুরি। মশলা মাখানো মাছগুলি বাঁধাকপি পাতার মাঝে রেখে চারপাশ মুড়ে সুতো দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলতে হবে। এর পরে কড়াইয়ে পরিমাণ মতো সাদা তেল দিয়ে গরম করতে হবে। পাতায় মোড়া মাছ কড়াইয়ে এমন ভাবে ছাড়তে হবে যাতে ভেঙে না যায়। হাল্কা আঁচে ভেজে তুলে নিতে হবে। |
কী লাগে |
মৌরলা মাছ ২০০ গ্রাম। মাঝারি মাপের নারকেল একটি। সাদা তেল দু’কাপ। সর্ষে বাটা চার চা-চামচ। লঙ্কা গুঁড়ো আধ চা-চামচ। বাঁধাকপি। |
|
থোড় পোলাও |
|
|
দিপালী ঘোষ |
আদর্শপল্লির বাসিন্দা দীপালি ঘোষের স্বামী ব্লাড সুগারের রোগী। সে কারণে বাড়ির রান্নাবান্নায় বৈচিত্র্য আনার বিশেষ সুযোগ ছিল না। এক সময়ে কর্তা ও ছেলেরা কার্যত বিদ্রোহ করে বসেন। ক্ষোভ কমাতে যে সব রান্নার ভাবনা তাঁর মাথায় এসেছিল, জানালেন তারই একটির ফর্মুলা।
থোড় কেটে টুকরো করে ১০ মিনিট গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। একটি আলু ছোট-ছোট করে কেটে কড়াইতে ঘি দিয়ে প্রথমে হাল্কা করে ভাজতে হবে। তার পরে ভেজানো থোড় কড়াইয়ে ভেজে নিতে হবে। পরিমাণ মতো নুন, চিনি, কাজু, কিসমিস ও গোবিন্দভোগ চালও হাল্কা আঁচে ভেজে নিতে হবে। তার পরে সামান্য জল দিয়ে সিদ্ধ করে দিয়ে দিতে হবে এক চিমটে জাফরান। পোলাওয়ের রঙ এলে থোড় মিশিয়ে দিতে হবে। কড়াইয়ের মধ্যে শুকিয়ে এলাচ ছড়িয়ে নামিয়ে নিলেই কেল্লা ফতে। |
কী লাগে |
গোবিন্দভোগ চাল ৪৫০ গ্রাম। থোড় ২৫০ গ্রাম। তিনটে ছোট আলু। ৫০ গ্রাম কাজু। ৩ চা-চামচ ঘি। একটি জাফরান। নুন, চিনি, এলাচ পরিমাণ মতো। |
|
পিঁয়াজপুলি |
|
|
মালতী সেন |
বছর দশেক আগে বহরমপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন সার্কাস ময়দানের মালতী সেন। শীতকালে পিঁয়াজ দেওয়া শিঙাড়া খেয়ে বেশ ভাল লেগেছিল সেখানে। তা থেকেই ভাবনাটা মাথায় আসে। বাড়ি ফিরে পিঠে তৈরির বদলে বুদ্ধি খাটিয়ে বানিয়ে ফেলেন ‘পিঁয়াজপুলি’। দেখতে অনেকটা ফ্রায়েড মোমোর মতো। জলখাবারের জন্য আদর্শ এই পদ তৈরি শেখালেন মালতীদেবী।
সাদা তেলের ময়ান দিয়ে ময়দা মেখে লেচি তৈরি করে লুচির মতো বেলতে হবে। এর পরে পিঁয়াজ, আদা কাটতে হবে। কুচিয়ে নিতে হবে লঙ্কা। তার মাঝেই নারকেল কুরে নিতে হবে। এই সব উপকরণ পরিমাণ মতো নুন-চিনি দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। লুচিগুলো পুলির আকারে মুড়ে তার মধ্যে পুর হিসেবে ওই সব উপকরণ ভরে বন্ধ করে দিতে হবে। কড়াইতে সাদা তেল গরম করে ভেজে নিলেই পিঁয়াজপুলি তৈরি। |
কী লাগে |
পিঁয়াজ ৩টে। লঙ্কা ৬টা। আদা পরিমাণ মতো। মাঝারি মাপের নারকেল একটা। ময়দা ২৫০ গ্রাম। সাদা তেল ২৫ গ্রাম। চিনি ও নুন পরিমাণ মতো। |
|
সংকলন: সৌমেন দত্ত।
ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। |