নিজস্ব সংবাদদাতা • মালবাজার |
বোনাস নিয়ে সমস্যার জেরে ডুয়ার্সের বামনডাঙা ও সামসিঙ চা বাগান বন্ধ হয়ে গেল। রবিবার রাতে বামনডাঙা বাগান ছেড়ে চলে যান বাগান কর্তৃপক্ষ। আর সোমবার ভোরে সামসিং বাগান ছেড়ে চলে যান কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দুটি বাগানই একই মালিক গোষ্ঠীর। সামসিং-এ ১৪.৫ শতাংশ এবং বামনডাঙায় ১০ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল মালিকপক্ষ। দুটি চা বাগানেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নেতৃত্ব ওই পরিমাণ বোনাসের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামার হুমকি দেয়। এমনকি, পাতা বাইরে যেতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তার পরেই দুটি একযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডুয়ার্সের চা বলয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। আজ, মঙ্গলবার মালবাজারের শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। এদিনও দফতরের আধিকারিকেরা দুই শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেন। বাগান দুটি বন্ধের খবর পৌঁছেছে মহাকরণেও। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “শিলিগুড়ির যুগ্ম শ্রম কমিশনারকে দ্রুত বাগান খোলার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “দ্রুত জট কাটবে বলে আশা করছি।” |
বাগান বন্ধের পর গোলমালও হয় সামসিং বাগানে। প্রথমে মোর্চা এবং কংগ্রেস সমর্থিত এনইউপিডব্লু’র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক এনইউপিডব্লু সমর্থকের হাতে ধারাল অস্ত্রে কোপ লাগে। তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন মোর্চা সমর্থককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পাল্টা শ্রমিক বস্তির বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে মেটেলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানা’র সামনেও একে অপরের মুখোমুখি হতেই ফের উত্তেজনা ছড়ায়। ঢিল ছোঁড়াছুড়ি শুরু হয় বলে অভিযোগ। মোর্চার শ্রমিক সংগঠনের ইউনিট সম্পাদক প্রকাশ দর্জি বলেন, “দলীয় নির্দেশে আমরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে স্মারকলিপি আর গেট মিটিং করেছিলাম। উল্টে আমাদের উপর হামলা হয়েছে।” পরে এলাকায় যান এলাকা থেকে নির্বাচিত জিটিএ-র সদস্য স্যামুয়েল গুরুঙ্গ। তিনি বলেন, “আমরা চাই দ্রুত বাগান খুলুক। তবে পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের উপর আক্রমণ হওয়ার পরেও আমাদের তিন সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।” আর এনইউপিডব্লুর বাগানের ইউনিট সভাপতি সাইলা ভুজেল এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি সহকারি সম্পাদক পুলিন গোলদার জানান, সামসিঙ চা বাগানে গতবছর ১১ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হয়েছিল। এবার তা বাড়িয়ে ১৪.৫ শতাংশ করা হয়। শ্রমিকরা এই বোনাস মেনে নিলেও মোর্চা গোলমাল পাকিয়ে বাগান বন্ধ করে দিল। দুটি বাগানের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও ইন্ডিয়ান টি প্ল্যানটেশন অ্যাসোসিয়েশন এর উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় সমস্ত চা সংগঠনদের নিয়ে বোনাস ঠিক হয়। শ্রমিকেরা তা না মেনে উৎপাদনে বাধা দেওয়ার জন্যেই বাগান দুটি বন্ধ করা হয়েছে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে। তবে আদিবাসী পরিষদের ডুয়ার্সের সম্পাদক রাজেশ লাকড়া অবশ্য বলেছেন, “বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ার মত দুটি ক্ষেত্রেই কিছু হয়নি। শ্রমিকেরা বেশি হারে বোনাসের দাবি তুলেছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই সমাধানসূত্র মিলবে।” |