নিজভূমে বাংলাদেশি অপবাদে জেলে ৫ বছর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তিনি ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু আইনি জটিলতায় অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি হিসেবে জেলে দিন কাটাচ্ছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও।
তাঁর নাম বীরেন দাস। ঝাড়খণ্ডের ওই যুবক নিম্ন আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে জেলে রয়েছেন। কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দিতে পারছেন না। নিয়ম অনুযায়ী কারাবাসের মেয়াদ শেষ হলে জেল-কর্তৃপক্ষ কাউকে আটকে রাখতে পারেন না। কিন্তু ওই যুবককে মুক্তি দিলে দেশের অনুপ্রবেশকারী আইন অনুযায়ী তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে হবে।
এই জটিল আইনি প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি চেয়ে বীরেন কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান। বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু সোমবার বলেন, নিম্ন আদালত যে-রায় দিয়েছিল, সেই রায়কে চালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা হলে তবেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
নিজের দেশেই কী ভাবে অনুপ্রবেশকারী বনে গেলেন বীরেন?
ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ২০০৭ সালে ওই যুবক বাড়ি থেকে ‘হারিয়ে’ যান। পথ হারিয়ে তিনি পৌঁছে যান হিলি সীমান্তে। সেখানে বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে। তিনি বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে এ-পারে এসেছেন বলে অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালে বালুরঘাট আদালত বীরেনকে দোষী সাব্যস্ত করে দু’বছরের কারাদণ্ড দেয়। পাঠানো হয় বহরমপুর জেলে। শুরু হয় তাঁর কারাবাস।
ভারসাম্যহীন বীরেনের জেলজীবনে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। বহরমপুর জেলের সুপার তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই যুবক। তিনি তাঁর ঝাড়খণ্ডের বাড়ির ঠিকানা, বাবা এবং পরিবারের অন্যদের নামও জানিয়ে দেন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঝাড়খণ্ডের ঠিকানায় খোঁজখবর করেন সুপার। দেখা যায়, সব কিছুই ঠিকঠাক বলেছেন ওই যুবক। সুপারের তৎপরতায় বীরেনের বাবা বহরমপুরে এসে ছেলেকে শনাক্ত করেন। এর মধ্যে ওই যুবকের কারাদণ্ডের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। আর তখনই আইনি জটিলতার প্রশ্নটি সামনে চলে আসে।
কারাবাসের মেয়াদ শেষে যুবকটি কোথায় যাবেন, ভাবনায় পড়ে যান জেলের সুপার। তখন বীরেন নিজেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, এখনই অব্যাহতির সম্ভাবনা নেই। বিচারপতি জানান, বালুরঘাট আদালতের রায় খারিজ না-হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কিছু করার নেই। তাঁর পরামর্শ, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করতে হবে। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায় খারিজ হলে তবেই প্রমাণিত হবে, বীরেন এই দেশেরই নাগরিক। |