স্টিয়ারিং ধরে মমতাই চালু রাখলেন বাস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল বাস-মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই হস্তক্ষেপ করলেন। আর তাঁর সঙ্গে আলোচনার পরেই লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত বাস ধর্মঘট স্থগিত রাখলেন মালিকেরা। কিন্তু রাস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় বেসরকারি বাস মিলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।
ধর্মঘট না-হলে বাস মিলবে না কেন?
অধিকাংশ বাস-মালিকের বক্তব্য, ভাড়া না-বাড়ালে পুজোর আগে দিনের পর দিন লোকসান সামলে তাঁরা শ্রমিকদের বোনাস এবং মাইনে দিতে পারবেন না। যাঁরা ইতিমধ্যেই লোকসান সামাল দিতে না-পেরে বাস তুলে নিয়েছেন, তাঁরা কোনও অবস্থাতেই ফের বাস নামাতে পারবেন না। কাজেই লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত ধর্মঘট করবেন না বলে সংগঠনের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়ে এলেও রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা বাড়বে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না মালিকেরা। শহর জুড়ে অটোরিকশা যে-ভাবে যথেচ্ছ ভাড়া বাড়াচ্ছে, তার উদাহরণ তুলে বাস-মালিকদের দাবি, তা হলে সরকার বাসের ভাড়া বাড়াতে দিচ্ছে না কেন? বিদ্যুৎ-সহ বেশ কিছু পরিষেবার মতো বাসের ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কমিশন গড়ার দাবিও তুলেছেন বাস-মালিকদের একাংশ। সরকার অবশ্য আগেই এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে।
সোমবার দুপুরে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল বাস-মালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের দুই নেতা সাধন দাস ও তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁদের আলোচনার জন্য ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। |
বাস-মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার মহাকরণে। —নিজস্ব চিত্র |
ছিলেন মদনবাবু, পরিবহণসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ছিলেন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহাও।
পরে সাধনবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পুজো পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। লক্ষ্মীপুজোর পরে ফের আমাদের সঙ্গে বসবেন।” সাধনবাবুরা তাঁদের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। বলেছেন, ভাড়া বাড়ানো ছাড়া অন্য রাস্তা নেই। দেশের অন্যান্য শহরে বাসভাড়ার একটি তালিকাও মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। আর কী ভাবে বাস শিল্পকে বাঁচানো যায়, সেই বিষয়ে ওই প্রতিনিধিদের ভাবতে বলেছেন মমতা। সাধনবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উনিও ভাবছেন। ওঁর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পেয়েই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে।”
সুনির্দিষ্ট আশ্বাসটা কী?
এই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি সাধনবাবু। তিনি শুধু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে ডেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর আগে কোনও মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে এ ভাবে আলোচনায় বসেননি। আমরা খুবই সন্তুষ্ট।”
সাধনবাবুরা সন্তুষ্ট হলেও বাস-মালিকদের একাংশের বক্তব্য আলাদা। এক বাস-মালিকের কথায়, “পুজোর আগে অটো ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেই ব্যাপারে তো সরকারের কোনও বক্তব্য নেই! বাসভাড়া ঠিক করতে কমিশন তৈরির দাবি জানিয়েছিলাম। তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেননি। এখন আমাদের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে ভাড়া না-বাড়ালে বাস চালানোর উপায় নেই।”
বাস-মালিকদের ভাড়া বাড়ানোর দাবি অনৈতিক, এমন দাবি এ দিন করতে পারেননি পোড়খাওয়া বাস-মালিক সংগঠনের নেতা স্বর্ণকমলবাবুও। তিনি বলেন, “খরচ খুব বেড়ে গিয়েছে। তবে সরকার যদি বিকল্প ব্যবস্থা করে, ভাড়া না-বাড়ালেও চলবে।’’ কিন্তু সেই বিকল্প ব্যবস্থার হদিস দিতে পারেননি স্বর্ণকমলবাবু। বাস-মালিকেরা জানান, খরচ চালাতে না-পেরে সারা রাজ্যে প্রায় অর্ধেক বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক কর্মী। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও ফের ওই বাসগুলির রাস্তায় নামার তেমন সম্ভাবনা নেই। তাই পুজোর সময়ে আমজনতার ভোগান্তি কমবে, জোর দিয়ে এমন দাবি করতে পারছে না কোনও পক্ষই।
বাসের ভাড়া নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি। অটোর বাড়তি ভাড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, “এই ক’দিন বাস নিয়ে গোলমাল থাকায় কিছু অটোচালক তার সুযোগ নিয়েছেন। সরকার এ-সব বরদাস্ত করবে না। আমরা যে-কোনও মূল্যে এ শহরে অটোরাজ রুখবই।” |